মীর আবদুুল আলীম

  ১৫ মে, ২০১৮

মতামত

বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

আসছে রমজান মাস। জন্মের পর থেকে দেখছি এ মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্যমূল্য বাড়ে। এ দেশের ব্যবসায়ী-মজুদদাররা ধরেই নেয়, মুনাফায় পকেট ভারী করার মওকাই হচ্ছে রমজান। রমজানে দুটো পয়সা কামিয়ে নিতে এরা কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নেয় আগেই। মজুদ গড়ে তোলে, দফায় দফায় মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস তোলে। পণ্যমূল্য নিয়ে আর কোনো দিন লেখব না এমনটিই ভাবছিলাম। লেখে কিই বা লাভ? আমার লেখায় কি বাজারে দ্রব্যের উত্তাপ এতটুকুও কমবে? ৩০ বছর ধরে লেখালেখি করেছি, কি সুফল পেয়েছে দেশের মানুষ? তবু আমি আশাহত নই। মানুষের বিবেক একদিন জাগবেই; মানুষের বোধোদয় হবেই। মানুষের মধ্যে ধর্মানুভূতি আসবেই। এমন আশা বুকে নিয়েই লেখি, লেখব। যত দিন জ্ঞান আছে, তত দিন লেখবই। এমন দিনের আমরা প্রত্যাশা করি, যেদিন রমজানে ব্যবসায়ীরা আর মুনাফা করতে চাইবে না। অন্তত এই একটি মাসে লাভের কথা চিন্তা না করে ভোক্তাদের কল্যাণে কাজ করবে।

যদি কোনো মুনাফাখোর, মজুদদার আমার লেখাটা পড়েন, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি। নানা ছলচাতুরীতে টাকার পাহাড় তো গড়েছেন। আর কত টাকা চাই আপনাদের? একজন মানুষের জীবনে কত টাকার প্রয়োজন হয়? দামি গাড়ি হাঁকান; নানা জায়গায় গড়ে তুলেছেন আলিসান বাড়ি; কারো কারো আছে ভোগবিলাসের বাগানবাড়িও। আর খাবার? যখন যা চাইছেন তাই তো মিলছে। বাঘের চোখও তো চাইলে আপনারা পান। এবার অন্তত সিয়াম সাধনার মাসে এ দেশের অসহায় মানুষগুলোর কথা ভাবুন। রোজার আগেই নিম্নআয়ের মানুষগুলো আপনাদের চাপিয়ে দেওয়া যথেচ্ছ দাম দিয়ে খাবার কিনতে পারছে না। ওরা দুবেলা পেট পুরে খেতে পাচ্ছে না। রোগে-শোকে মরছে। আপনারা কি নিজের সন্তান না খেয়ে কাতরানোর দৃশ্য দেখেছেন কখনো? অভাবী মানুষগুলো প্রতিনিয়তই তা দেখছে। ওদের অভ্যাসগত দেখা এটি। সামান্য টাকার অভাবে ওরা সন্তানের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুটাও চেয়ে চেয়ে দেখে।

মানুষকে জিম্মি করে ভোগ্যপণ্যের অধিক মুনাফা লাভের এই খেলা কেন সরকার বন্ধ করতে পারে না? কিন্তু এই সম্ভবকে অসম্ভব করতে হলে সরকারকে অবশ্যই হার্ডলাইনে যেতে হবে। প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে সেসব অসাধু ব্যবসায়ীকে, যারা সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে। অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন যত কম হবে, পণ্যের দাম তত বেশি হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, ততবারই বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বড় বড় ব্যবসায়ী সরকারকে বারবার আশ্বাস দিচ্ছে, রোজার মধ্যে পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন বাজারে নেই।

রমজান উপলক্ষে বিশেষ কতক পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, মসুর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, নানা রকম মসলাসহ চাহিদা বাড়ে মাছ, মাংস ও দুধের। আর ব্যবসায়ী-মজুদদাররা ধরেই নেয়, মুনাফায় পকেট ভারী করার মৌসুমই হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। রমজানে দুটো পয়সা কামিয়ে নিতে এরা কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নেয়। মজুদ গড়ে তোলে, দফায় দফায় মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ে। এই মুনাফাখোররা এ দেশের অসহায় মানুষের কথা ভাবে না।

এ দেশে দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়। কোনো পণ্য আজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে, কাল সেই একই পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। তবু মন্দের ভালো এবার রমজানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে না। সরকারের ব্যাপক প্রচেষ্টায় এক মাস আগের ২৫ টাকার পেঁয়াজ এখন পাচ্ছি ৪০ টাকায়। সব পণ্যতেই কমবেশি রমজানের আঁচ লেগেছে। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোটক। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরকারকে কঠোর হাতে অতিলোভী এই ব্যবসায়ীদের দমন করতে হবে। আশার কথা, এবারের রমজানে দ্রব্যমূল্য এবং চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। যতটুকু জেনেছি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে; পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। সারা দেশে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভাগীয় এবং জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এ ধারা অব্যাহত রাখলে হয়তো দ্রব্যমূল্য অনেকটাই সহায়ক পর্যায়ে পৌঁছাবে। তবে সরকারকে এই লাগাম শক্ত করে ধরতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist