চাই শোষণ বঞ্চনাহীন নতুন জীবন
আজ পহেলা মে। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময়ের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর হে মার্কেটের ধমর্ঘটে শ্রমিকরা যে দাবি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই শ্রমিকের সে অধিকার এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। আবার যেসব দেশে কার্যকর হয়েছে, সেসব দেশেও তা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমাদের দেশেও শ্রমিকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত নয়, নানাভাবে নানা ক্ষেত্রে শ্রমিকরা উপেক্ষিত। এমনকি ন্যায্য মজুরি থেকেও তারা বঞ্চিত। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার গার্মেন্টেও ভবন চাপা পড়ে, আগুনে পুড়ে শত শত শ্রমিককে প্রাণ দিতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়াও নিশ্চিত হচ্ছে না। এ খাতে শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারিত হলেও সবক্ষেত্রে তা অনুসৃত হচ্ছে না। অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা।
২০০৬ সালে দেশে শ্রম আইন প্রণীত হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকরা এখনো সেই আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। মনে রাখতে হবে, শিল্প ক্ষেত্রে সুস্থ অবস্থা তৈরি ও শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য তাদের ন্যায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও উন্নত জীবনমানের নিশ্চয়তা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর মে দিবসের পথ ধরেই শ্রমিকদের এ অধিকার অর্জিত হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমের মর্যাদা পেয়েছে গুরুত্ব। উন্নত দেশে এখন শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি কাজের পরিবেশও হয়েছে উন্নত। তবে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর শ্রমিক শ্রেণির দুর্দশা ঘোচেনি। শ্রমিক শ্রেণির অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হলেও তা মানা হচ্ছে না। অনেক বেসরকারি শিল্প-কারখানায় আইএলও নির্ধারিত শ্রমঘণ্টাও মানা হয় না। মে দিবসে শ্রমিক শ্রেণির মানবেতর জীবনের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করতে হবে আমাদের সবাইকে।
আজ রাতে পবিত্র শবেবরাত। মহিমান্বিত এই রজনীকে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মুসলমানরা পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে তাদের আকুতি জানান। সারা রাত ইবাদতে মগ্ন থাকেন। আল্লাহর রহমত, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করেন। শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয়, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও সবকিছু শুভ ও সুন্দর হোক, আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা আমাদেরও। আজ দুটি দিনের দুই ধরনের তাৎপর্য। শবেবরাত যেমন আমাদের সবার ব্যক্তিগত জীবনে মুক্তি ও সৌভাগ্যের বার্তা বয়ে আনে। তেমনি মেহনতি মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে মে দিবস। সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার ভিত্তিতে আমরা যেন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যেতে পারি। দেশকে উন্নয়নের পাশাপাশি যুদ্ধ বিবাদ ভুলে বিশ্বব্যাপী গড়ে তুলতে পারি শোষণ বঞ্চনাহীন এক নতুন জীবন। এটাই হোক আজকের দিনের শপথ ও বিশেষ প্রার্থনা।
"