বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে
এ আর নতুন কি? রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপণের দাম বাড়বে। থাকবে ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাত, নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো প্রতিফলন ঘটে না। বরাবরই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা থাকেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। রমজানের আর সপ্তাহ কয়েক বাকি। এর মধ্যেই নিত্যপণ্য বা যেসব দ্রব্যের চাহিদা বিশেষ সময়ে বেড়ে ওঠে, সেগুলোর দাম বাড়তে শুরু করেছে। যদিও বাজারসংশ্লিষ্টরা রোজায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এসবের বাস্তবায়ন নিয়েই থাকে নানা প্রশ্ন। কারণ, রোজার সময় প্রশাসন মূল্য নিয়ন্ত্রণে তৎপর থাকে বলে ব্যবসায়ীরা এখনই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় দিশাহারা হচ্ছেন ভোক্তা সাধারণ।
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজারের প্রতিটি স্তরে সরকারকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে সিন্ডিকেট করে কেউ যেন পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ বেআইনি কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি টিসিবিকেও সক্রিয় করতে হবে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে ‘রমজানের আগেই বাড়ছে পণ্যের দাম’ শীষর্ক বিশেষ প্রতিবেদনে গত কয়েক দিনের বাজার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, রোজার আগেই ছোলা ও মুড়ির দাম বেড়েছে। ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭৫-৮০ টাকা, যা গত দুই মাস আগেও বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। দুই মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া গত ১৫ দিন আগে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকার চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়। রোজা এলে বেগুনের দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। গত ১৫ দিনে ৩০ টাকার বেগুন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। খেজুরের দাম মানভেদে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া খেসারি ৭০ টাকা, ডাবলি ৪০, মুগডাল ১১০ এবং মসুর ডাল মানভেদে ১০০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে টিসিবি। সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারি সংস্থাটি। টিসিবিকে অকার্যকর করে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে একটি চক্র। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস ‘রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মজুদ বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া টিসিবিতে প্রয়োজনমতো পণ্য মজুদ রাখা হচ্ছে। কোনো রকম সংকটের আশঙ্কা নেই।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বর্তমান পরিস্থিতিতে যা করা দরকার তা হলো, বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে কার্যকর করে তোলা। সরকারকে ব্যবসায়ীদের ওপর বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দামে সামঞ্জস্য আছে কিনা-নিয়মিত তা তদারকিও জরুরি। এমনকি বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি, সেসব পণ্যের জোগান বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ আমাদের প্রত্যাশা।
"