আবদুল্লাহ আল মেহ্দী

  ২৬ এপ্রিল, ২০১৮

মতামত

সোনালি আঁশের সমস্যা ও সম্ভাবনা

প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট বাংলাদেশের অন্যতম একটি ফসল। পাট চাষের জন্য এ দেশের ভূমি ও জলবায়ু বেশ উপযোগী। দেশের উৎপাদিত পাটের বাজারকে কেন্দ্র করে ১৯৫১ সালে নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছিল আদমজী পাটকলের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। দেশে বর্তমানে ২৬টি সরকারি ও ৭৬টি বেসরকারি পাটকল রয়েছে। যদিও সব কটিতে এখন উৎপাদন হয় না। কলগুলো পুরনো হওয়ায় কাক্সিক্ষত উৎপাদন পাওয়া যায় না বলে তথ্য পাওয়া যায়। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মিলগুলোয় লোকসান হয়ে থাকে। বেসরকারি পাটকলগুলো মুনাফা করছে, সেখানে আমাদের সরকারি পাটকলগুলো ক্ষতির সম্মুখীন। কারণ হিসেবে অতিরিক্ত রূপান্তরিত ব্যয়, উচ্চমূল্যে পাট ক্রয় ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাট ক্রয় করতে না পারাই দায়ী।

রফতানি বৈদেশিক আয়ের একটি অংশ পাট থেকে এসে থাকে। পাট থেকে সুতাসহ অন্যান্য পাটসামগ্রী উৎপাদন হয়ে থাকে। পৃথিবীতে ১৯ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করে ৩২ লাখ টন পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। ৮ দশমিক ৩৩ লাখ টন বা পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ২৬.০২ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশে পাটের প্রধানত দুটি প্রজাতি, সাদা পাট ও তোষা পাট, যা আঁশ হিসেবে বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে। পাটগাছের দুটি প্রজাতিই এবং মেস্তা ও শণপাট বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। পাট ও বস্ত্র, পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে একটি তদারক সংস্থা হওয়া প্রয়োজন।

পাটশিল্পে এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয় জড়িত। কাজ করার সময় মন্ত্রণালয়কে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের জন্য কাজ এগোয় না।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের গবেষণা করা যেতে পারে। এ ছাড়া আমরা কৃষকদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দেওয়া। পর্যাপ্ত গুণগত মানসম্পন্ন বীজ, কীটনাশক, সার, পাট পরিষ্কারের উপকরণ, বীজ শুকানোর শিট ইত্যাদি দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

নতুন নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে হবে। শুধু কাঁচামাল রফতানি না করে পাটের তৈরি পণ্য উৎপাদন করতে হবে; তাহলে দেশ আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও সিড প্যাথলজি কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, ভালো মানের পাটের উৎপাদনের জন্য গুণগত মানের দেশীয় বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করতে হবে। ভারত থেকে নিম্নমানের বীজ আমদানি বন্ধ করা উচিত। বীজ উৎপাদন পর্যায়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) পাটের বীজের জন্য কৃষকদের ওপর নির্ভরশীল, তাই মানসম্মত বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া পাটের রোগবালাইও আছে। শুকনা ক্ষতরোগ, পাটের কালোপট্টি রোগ, পাটের মোজাইক রোগে পাটের আঁশ আক্রান্ত হয়, ফলে গুণগত মান কমে যায়। এ ছাড়া পাটের বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা, চেলে পোকা গাছে ক্ষত সৃষ্টি করে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্য পাট দিয়েই তৈরি করা সম্ভব। পাট থেকে শুধু ছালা, বস্তা, চট এগুলোই উৎপন্ন হয় না। বর্তমানে দেশে নিজস্ব বিনিয়োগকারীরা ১৫০ ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন করছেন। যদি ফিনিশিং দিয়ে পণ্য তৈরি করতে পারি, তাহলে বিদেশের বাজারে নিজেদের মর্যাদাসম্পন্ন পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। পাটের তৈরি জিনিসপত্র পরিবেশবান্ধব। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ও অন্য দ্রব্যাদি ব্যবহার না করে পাটের তৈরি জিনিস ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২৫টি দেশের বাইরেও কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ১২০টি দেশে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে শপিং ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। তাই পাটজাত শপিং ব্যাগ রফতানির ক্ষেত্রে এ দেশের ভালো সুযোগ রয়েছে।

মিডিয়া তথ্য মতে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মিলে সাত শ-এর বেশি প্রতিষ্ঠান পাটজাত পণ্য তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। পাটের গতানুগতিক ব্যবহারের ধারণা থেকে বেরিয়ে পাটজাত পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করছে ১০টি মাঝারি ও ৩৮ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাটশিল্পের সঙ্গে প্রায় চার কোটি মানুষ জড়িত। পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাট খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও রফতানি সম্ভাবনার ওপর। এ ক্ষেত্রে সরকারকে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist