কমেছে মূল্যবোধ বেড়েছে অবক্ষয়
সম্ভবত লিখতে লিখতে হাতটা পাথর হয়ে গেলেও এর কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। তা না হলে এত দিনে কিছু একটা হতো। মিডিয়াতেও তো আর কম লেখা হয়নি। ক্রমাগত লেখার কারণে কলমের ধারও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। অনেকটা ভোঁতা তলোয়ারের মতো। আমার এ মতের সঙ্গে অনেকে হয়তো একমত পোষণ না-ও করতে পারেন। অনেকে বলছেন, কলমের ধার কমে যায়নি। খামোখা জড় বস্তুটার ওপরে দোষ চাপিয়ে কোনো লাভ নেই। দোষ যদি দিতেই হয়, তাহলে কলমের পেছনে থেকে এই কলম যারা পরিচালনা করছেন, এ দায় তাদের। বিভক্ত হতে হতে তারা এখন ছোট ছোট কয়েকটি গোত্রে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের একটি তলোয়ার এখন ছোট ছোট কয়েকটি ছুরিতে পরিণত হয়েছে। যে ছুরিতে ধার দিলেও, সে ধার বেশি দিন থাকে না। খুব অল্প সময়েই তা ভোঁতা হয়ে যায়।
সেই ভোঁতা সময়ের ভোঁতা সমাজেই আমাদের বাস। একসময় সুশীল সমাজ আমাদের পথ দেখাতেন। এখন যেন তাদের দাঁতেও সে ধার নেই। আমরা যারা সাধারণ, তাদের মরচে ধরা মেধা ও সাহসের মতো মেধাহীন ও দুর্বল হয়ে গেছে। অনেকটা গৃহপালিত পশু কিংবা ক্রীতদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজেকে সমাজের একজন কেউকেটা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। নতুবা, চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী অথবা পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ, শিশুকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, নববধূকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ কেন! এখানেই শেষ নয়। প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, গোপন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগী ধর্ষিত, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষিকাও নির্যাতনের বাইরে থাকতে পারছেন না। তাকেও ধর্ষণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিদিনের এমনসব ভয়ঙ্কর খবরে নাগরিক জীবনে অস্বস্তির মাত্রা যেন সব সীমা অতিক্রম করেছে। এর শেষ কোথায়, তা-ও আমরা জানি না। তবে অনুভব করা যায়। গত এক বছরে ধর্ষণের পরিসংখ্যান উল্লেখ না করেই বলা যায়, সমাজে মানুষের ঘাটতি না থাকলেও মূল্যবোধের ঘাটতি আকাশ ছুঁয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আর স্বাভাবিক কারণেই সামাজিক অবক্ষয় এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে তলানিতেÑ সবাই ভাবছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যাদেরকে বিষয়টি নিয়ে ভাবার কথা, সমাধান করার কথাÑ তারা কোথায়! প্রশ্ন উঠেছে, সেই সব ভাবুকদের এই ভাবনায় ঢুকতে আরো কত সময়ের প্রয়োজন হবে? প্রশ্নটা কারো একার নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির।
"