মো. আবু তালহা তারীফ

  ২০ এপ্রিল, ২০১৮

ধর্ম

হালাল পথে অর্জন

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। মানুষের ঈমান আক্বিদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান ও দিকনির্দেশনাসহ যাবতীয় মূলনীতি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে পেশ করা হয়েছে। ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে যেমনিভাবে আল্লাহর বিধান মেনে চলা অত্যাবশক, অনুরূপভাবে সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রেও তার বিধান মেনে চলাও অত্যাবশ্যক। সম্পদ উপার্জন অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ক্ষেত্রে যাতে ভারসাম্য ক্ষুন্ন না হয়, সেজন্য ইসলাম হালাল হারামের সুস্পষ্ট সীমারেখা নির্দিষ্ট করে রেখে দিয়েছে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জন বলতে বৈধ উপার্জনকে বোঝায়। অল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত ও অনুমোদিত পন্থায় যে জীবিকা উপার্জন করা হয়, তাকে হালাল উপার্জন বলে। হালাল উপার্জনের মধ্যে রয়েছে মানুষের বিপুল কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হালালকে উত্তম ও পবিত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু খাও, যা আমি তোমাদের জীবিকারূপে দান করেছি’ (সূরা বাকারা : ১৭২)।

মানবজীবনে জীবিকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিজ নিজ যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী জীবিকার জন্য পরিশ্রম ও চেষ্টা-তদবির করা সক্ষম প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। মানুষর দায়িত্ব হলো চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের কর্তব্য চেষ্টা তদবির করা’ (সূরা নাজম-৩৯)। আল্লাহ তায়ালা রিজিকদাতা। তবে রিজিক অন্বেষণ করার দায়িত্ব তিনি বান্দার ওপর অর্পণ করেছেন। আল্লাহর ইবাদাত করার পর আল্লাহ নিজেই মানুষদেরকে পৃথিবীর জমিনে কাজ করার জন্য বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান কর’ (সূরা জুমআ-১০)। পরিশ্রম না করে অলস বেকার ও কর্মবিমুখ করে ঘরে বসে থাকা ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক না। যেহেতু জীবিকা অর্জন করা অবশ্যই কর্তব্য সেহেতু অলস বসে থাকার অবকাশ ইসলামে নেই। মহান আল্লাহর প্রেরিত সব নবী রাসুলগণ পরিশ্রম করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, হজরত দাউদ ও সুলাইমান (আ.) লৌহবর্ম তৈরি করতেন, হজরত আদম (আ.) কৃষিকাজ করতেন, হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন, হজরত ইদ্রিস (আ.) ছিলেন দর্জি ও হজরত মুসা (আ.) ছাগল চড়াতেন (মুস্তাদরাক, হাকেম)। বিমুখ ও অলসতা করে অথবা কাজ পাই না বলে নিরুৎসাহীত হওয়া যাবে না। পরিশ্রম করে যেকোনো কাজ করতে হবে। কাজ না পেলে সর্বদা জীবিকা অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতে বসে থাকা যাবে না। হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার্জনের চেষ্টায় নিরুৎসাহী হয়ে বসে না থাক’ (কানজুল উম্মাল)। যারা পরিশ্রম না করে অলস অবস্থায় বসে থাকে এবং কোনো কাজ করে না, তারা নিজেরা তাদের নিজেদের দুঃখ দুর্দশা ডেকে আনে। তারা কখনো সফলতা অর্জন করতে পারবে না। যারা এমনটা করবে, তারা রাসুল (স.)-এর অনুসারীদের মধ্যে গণ্য নয়। যারা অলস ও কর্মবিমুখ তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বিনা কারণে নিজের ওপর দুঃখ দুর্দশা টেনে আনে অলসতা দ্বারা উপার্জন না করে, সে আমার অনুসারীদের মধ্যে গণ্য নয়’ (আল হাদিস)।

বৈধ কাজের মাধ্যমেই সম্পদ বা জীবিকা উপার্জনের পথ অবলম্বন করতে হবে। হালাল উপার্জন করা ফরজ এবং অবৈধ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা হারাম। অবৈধ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে যে অর্থ সম্পদ হাসিল করা হয়, তা খেয়ে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত কবুল হয় না। এমনকি, অবৈধ সম্পদ দ্বরা কোনো নেক কাজ করলে তা-ও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। অবৈধ সম্পদ উপার্জন করা ব্যক্তির স্থান হবে জাহান্নাম। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে দেহ হারাম মাল দ্বারা লাািলত পালিত তা কখনো জান্নাতে যাবে না। বরং জাহান্নামেই এর জন্য উপযুক্ত ঠিকানা’ (আহমদ তিরমিজি)। ইসলামে হালাল উপায়ে সম্পদ উপার্জনের উপায় বা উৎসসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন শ্রম, কৃষিকাজ, শিল্পকারখানা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পশুপালন, হাসমুরগির খামার, মৎস্য চাষ, বৃক্ষরোপন, নার্সারি ও কুটিরশিল্প ইত্যাদি। এ ছাড়া ইসলামি অর্থনীতিতে অর্থসম্পদ আহরণের মূল উপাদান ও উপকরণ প্রধানত- ১. ভূমি, ২. ব্যবসা-বাণিজ্য, ৩. শিল্প, ৪. মূলধন, ৫. হিবা ও অসিয়াত ৭. উত্তরাধিকার ও ৮. বাইতুল মাল। হালাল ব্যবসা ও নিজ হাতের উপার্জনকারী ব্যক্তি হচ্ছেন সর্বোত্তম। কেননা, রাসুল (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন প্রকারের উপার্জন সর্বোত্তম? এ সম্পর্কে নবী করিম (স.) বলেন, ‘নিজ হাতের উপার্জন এবং হালাল ব্যবসায়ের উপার্জন’ ( মিশকাত, আহমদ)। সব অবস্থায় হালাল উপায়ে ব্যবসা দ্বারা জীবিকা অজর্ন করতে হবে। অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করা যাবে না। অবৈধ উপায়ে ব্যবসায়ী ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পাপী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা ওঠাবেন। রাসুল (স.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপী হিসেবে ওঠানো হবে। তবে যারা মুত্তাকি, ন্যায়-নিষ্ঠ ও সততার সঙ্গে ব্যবসা করেছে তাদের কথা ভিন্ন’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। সুতারং, সবসময় দিক-দিগন্তে বিচরণ করে আল্লাহর প্রদত্ত জমিন থেকে আহার গ্রহণ করতে হবে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য ভূমিকে সুগম করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহই তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন। অতএব, তোমরা তার দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে আহর্য গ্রহণ কর’ (সূরা মূল্ক-১৫)।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist