শামীম শিকদার

  ১০ এপ্রিল, ২০১৮

পরিবেশ

মশা রোধ প্রসঙ্গে

নির্দিষ্ট কোনো সময় চিহ্নিত করে বলার তেমন প্রয়োজন নেই, কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় বছরের পুরোটা সময়েই মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ থাকে নগরবাসী। ঘরে ও বাইরে কোনো স্থানই বাদ যাচ্ছে না মশার বাসস্থান হিসেবে। রাতে মশার কামড়ের অতিষ্ঠতা বেশি থাকলেও বর্তমানে দিনেও এর উপদ্রব বাড়তে শুরু করেছে। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই মশার উপদ্রব। কোনো কোনো এলাকায় মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে, সেসব এলাকায় দিনের বেলায়ও মশারি টাঙাতে হচ্ছে। বিরক্তিকর উপদ্রবের পাশাপাশি তারা রোগজীবাণু সংক্রামণ করে। এ মশা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীতজ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতিসহ মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত অর্থবছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ রাখলেও তা তেমন কোনো কাজে আসেনি। রাজধানীতে অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় পানি। খাল, ডোবা ও নালায় জমে থাকা ময়লা পানিতে ব্যাপক মশা জন্ম নেয়। সেখান থেকেই মশা রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীর রাস্তাঘাটে সংস্কার আর ভাঙাগড়ার খেলা দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস নয়, বছরের পর বছর ধরে এ দুর্ভোগে ঢাকাবাসী। ওয়াসার কাজ শেষ হলে শুরু হয় সিটি করপোরেশনের ভাঙাগড়া। আবার টিএন্ডটি শেষ করলে শুরু করে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। এতে নগরীতে বাড়ে যানজট, ঘটে দুর্ঘটনাও। এসব কাজের জন্য কোথাও ধুলার পরিমাণ বেশি, কোথাও পানি আটকে আছে আবার কোথাও ইট-কাঠের এ শহরে নাগরিকদের ভোগান্তি দিচ্ছে কাদা। তবে নাগরিকের এ ভোগান্তি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মালিবাগ মোড় থেকে কাকরাইল মোড় এলাকায় বেশি।

রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী খাল এখন আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। পুরো এলাকার পানি নিষ্কাশনের এ খালটির বনশ্রী সি-ব্লক থেকে মেরাদিয়া হাট পর্যন্ত অংশ মশা উৎপাদনের ‘কারখানা’ হিসেবে পরিচিত। মশার উৎপাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর মাদারটেক, নন্দীপাড়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কালশী, ভাসানটেক, কল্যাণপুর, দারুসসালাম, নাখালপাড়া, মহাখালী, বাসাবো, খিলগাঁও, মুগদা, মানিকনগর, শনির আখড়া, মীরহাজারীবাগ, বছীলা এলাকায় মশার উৎপাত বেশি। ওইসব এলাকায় ডোবা-নালা ছাড়াও বেশ কিছু খাল ও ছোট ঝিল রয়েছে। খালগুলোয় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পচা পানি মশার প্রজননকেন্দ্র হয়েছে। ঝিলেও কচুরিপানা আর ময়লা পচে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ওইসব খাল-ঝিল পরিষ্কারও করা হয় না, সেখানে ওষুধও ছিটানো হয় না। খালগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় ময়লার স্তূপ জমেছে। খালে পানির প্রবাহ না থাকায় আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা সেখানে জমাট বেঁধেছে। ওই খাল, ঝিল ও ডোবা মশার উৎস। ঢাকার খাল, ডোবা ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা, রাজউক, গণপূর্ত অধিদফতর ও ঢাকা জেলা প্রশাসন ওইসব খাল, ডোবা, নালা পরিষ্কার না করায় সেগুলো মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। সেখানে মশার বংশ বিস্তার ঠেকাতে সিটি করপোরেশনও নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করছে না। আবার সিটি করপোরেশনের ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। বেশ কিছু যন্ত্র পুরোনো, সেগুলো এখন আর কাজ করছে না। ডিএসসিসিতে মশার ওষুধ ছিটানোর মেশিন রয়েছে ৯৪০টি। এর মধ্যে হাতে চালিত ৪৪২টি, ফগার মেশিন ৪৪৭টি এবং হুইল ব্যারো মেশিন রয়েছে ৫১টি। এসবের মধ্যে ২০৮টি হাতে চালিত মেশিন ও ১৮৬টি ফগার মেশিনে খুব একটা কাজ হয় না। আর ১৮টি হুইল ব্যারো মেশিন দিয়েও কাজ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ডিএনসিসির ৬৫৩টি মেশিনের মধ্যে হাতে চালিত ৩৮৭টি, ফগার মেশিন ২৫৫টি ও হুইল ব্যারো মেশিন ১০টি। এ ছাড়া একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড ফগার মেশিন রয়েছে। এসবের মধ্যে শতাধিক মেশিন দিয়ে এখন আর কাজ করা যায় না। এ ছাড়া পুরোনো মেশিনে অতিমাত্রায় শব্দ হওয়ায় মশা একস্থান থেকে অন্যস্থানে সরে যায়।

জানা যায়, রাজধানীর বেশ কিছু পুকুর গণপূর্ত অধিদফতরের মালিকানাধীন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে যেসব এলাকায় আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানেই পুকুর বেশি। এমন একটি পুকুর আছে আজিমপুর এলাকায়। ওই পুকুরটি বৃষ্টির পানি ধারণের আধার বলা হলেও বাস্তবে এটি এখন আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় পুকুরটি এখন মশার প্রজননক্ষেত্র। একই অবস্থা রয়েছে গণপূর্ত অধিদফতরের মালিকানাধীন এলেনবাড়ী পুকুর ও মিরপুর টোলারবাগ আবাসিক এলাকার পুকুরটি।

ঘরোয়াভাবে মশা তাড়ানোর জন্য লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার, নিমের তেলের ব্যবহার, পুদিনার ব্যবহার, ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়োর বব্যবহার, হলুদ বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবহার, চা-পাতা পোড়ানো, নিমপাতা পোড়ানো, ক্যাটনিপ অয়েল বারান্দায় চামচিকার বাক্স রাখা, ফ্যান চালু রাখা, কালো নীল ও লাল কাপড় এড়িয়ে চলা, কর্পূরের ব্যবহার করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, রসুনের স্প্রে করা, কেরোসিন তেল স্প্রে করা, জমানো জল থেকে দূরে থাকা, নারিকেলের আঁশ পোড়ানোর মতো কাজগুলো করা যেতে পারে। মশার উপদ্রব থেকে রাজধানীবাসীকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশন ও মশক নিবারণী দফতরকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ওষুধ ছিটানোর জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল নিয়োগ করতে হবে। খাল-ঝিল, নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে, যাতে এগুলো মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত না হয়। তা ছাড়া জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।

লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist