আবদুর রহমান

  ২৮ মার্চ, ২০১৮

মতামত

স্থিতিশীলতার চ্যালেঞ্জ

সোনার বাংলার স্বপ্নযাত্রায় যুক্ত হলো অনন্য গৌরবময় অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতি উপহার পেল উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি সনদ। কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) অধিবেশনে ওইদিন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের হাতে স্বীকৃতি সনদ তুলে দেন সিডিপির প্রধান কর্মকর্তা রোলান্ড মোলেরাস। তলাবিহীন ঝুড়ির কলঙ্ক মোচন হলো বাংলাদেশের। এই স্বীকৃতি বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি উন্নীত করবে, উন্মোচিত করবে সম্ভাবনার দ্বার। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল হওয়ার তিনটি সূচকেই মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। আগামী চার বছর মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে যদি ধারাবাহিক সাফল্য অব্যাহত থাকে, তবেই মিলবে স্থায়ী স্বীকৃতি। অর্থনৈতিক অগ্রগতি অক্ষুণœ রাখতে সুশাসন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রণিধানযোগ্য। কেননা টেকসই উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠাণিক গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে সম্পদের সুষম বণ্টন, মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠন, রফতানি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও মানবাধিকার। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসহ দেশের উন্নয়ন প্রশ্নে ও জাতিয় স্বার্থে জাতিয় ঐক্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ও সক্ষমতা বাড়িয়ে প্রতিকূলতা জয় করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বের চোখে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’কে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আদিষ্ট হতে পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। উন্নয়নশীল দেশের তকমা পাওয়ায় বৈদেশিক অনুদান, স্বল্প সুদে ঋণপ্রাপ্তি ও ৪০টি দেশ থেকে প্রাপ্ত জিএসপি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থা আমরা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে ঋণ পেতাম। কিন্তু এখন সে অঙ্ক দাঁড়াবে দুই শতাংশের ওপর। আবার জিএসপি সুবিধা হারানোয় বেড়ে যাবে রফতানি শুল্ক, যা সিপিডির অঙ্কে বছরে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ফলে আর্থিক চাপে পড়বে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি। বাজার ভারসাম্য ও বাণিজ্য ঘাটতিও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক মুদ্রা পাচার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেসন’ বলেছে, গত ১০ বছরে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছে লাখ কোটি টাকারও বেশি। বারবার প্রকল্পব্যয় বাড়িয়ে অপচয় হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে ও সংকুচিত শ্রমবাজারের জন্য রেমিট্যান্সপ্রবাহে ভাটা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাড়ছে দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকা-। সম্পদের অসম বণ্টন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যে বাড়ছে ধনী-গরিব অনুপাত। কর্মসংস্থানের অভাবে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। দেশের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব সেক্টরে যে নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলছে, তা ঠেকাতে হবে। আইন আরোপ ও সচেতনতা বাড়িয়ে রোধ করতে হবে সামাজিক অবক্ষয়। অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, উন্নয়নশীল হওয়ায় বিদেশি ঋণ ও কর বাড়াবেন। প্রশ্ন হলো, বিদেশি ঋণ ও করের বোঝা যদি জনগণের ঘারেই বর্তায়, তবে উন্নয়নের সুফল কী তারা পাবে? তা ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে সহিংস রাজনীতির শঙ্কাও তো আছে। এখন দেখার বিষয় সরকার ওই চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করে কতটুকু এগোতে পারে।

এ অর্জন বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি দেবে। আকৃষ্ট হবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। গড়ে উঠবে নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাড়বে কর্মসংস্থান, কমবে বেকারত্ব। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিবর্তিত করলে শ্রম রফতানির সঙ্গে সঙ্গে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও রাখবে অবদান। কৃষি খাতে গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত করতে হবে খাদ্য নিরাপত্তা। পোশাক খাতের পাশাপাশি ওষুধশিল্প, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীসহ অন্যান্য পণ্যের উৎকর্ষ করে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়িয়ে রফতানি করতে হবে। আইনের শাসন নিশ্চিত করে সামাজিক নিরাপত্তা ও মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশুবান্ধব একটি মানবিক রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে। প্রলয়ঙ্করী দুর্নীতির গ্রাস থেকে বাঁচাতে হবে আর্থিক খাতকে। পুঁজিপতিদের মজুদ অর্থ বিনিয়োগে বাধ্য করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঘোচাতে হবে সরকারি বে-সরকারি বৈষম্য। ক্ষমতায় থাকতে আর ক্ষমতায় যেতে বৈপরীত্য পরিহার করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সহনশীল সমঝোতার রাজনীতি। কেননা স্থিতিশীলতার পরিবর্তে সহিংস রাজনীতি দানা বাঁধলে বাধাগ্রস্ত হবে উন্নয়ন হারাতে হবে স্বীকৃতি, যা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। তিমিরেই রয়ে যাবে উন্নয়নশীল আর মধ্যম আয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। সুতরাং বিভেদ নয় চাই ঐক্যের রাজনীতি। ঐক্যই শক্তি, ঐক্যই মুক্তি আর ঐক্যেই অর্জিত হবে উন্নয়নশীল দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist