দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২৪ মার্চ, ২০১৮

মতামত

বেসরকারি খাতের সাফল্য

দুনিয়ার যেসব দেশ শিল্পায়নে এগিয়ে যাওয়ার সাফল্য দেখিয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। শিল্প ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে কয়েক বছর ধরে, তাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা। দেশে তৈরি উন্নতমানের কাগজ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। চিনি পরিশোধনেও এগিয়ে রয়েছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তারা এখন পরিশোধিত চিনি বিদেশে রফতানি করতে চাইছেন।

শুধু পাট, কাগজ বা চিনি নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রেই এখন বেসরকারি খাতের আধিপত্য। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বস্ত্র ও পোশাকশিল্প গত কয়েক দশকে অর্থনীতির মেরুদ- হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সিমেন্ট, ওষুধ, চামড়া, জাহাজ নির্মাণশিল্পে বাংলাদেশের সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বিশ্বের মোট পোশাক সরবরাহের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস বাংলাদেশ। জাহাজ নির্মাণশিল্পে বাংলাদেশের সাফল্য সত্যিকার অর্থেই গর্ব করার মতো। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ জার্মানির মতো ইউরোপীয় দেশেও রফতানি হয়েছে। দেশেই তৈরি হচ্ছে যুদ্ধজাহাজ। বাংলাদেশের চামড়াশিল্প আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হচ্ছে উন্নত দেশগুলোয়ও। প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হচ্ছে দুনিয়ার বহু দেশে। ওষুধশিল্পে বাংলাদেশের উত্থান রূপকথার মতো। যে দেশ স্বাধীনতা লাভের সময় ওষুধের জন্য প্রায় শতভাগ ছিল পরনির্ভরশীল, সে দেশের ওষুধ এখন রফতানি হচ্ছে পৃথিবীর ১২৭ দেশে। ওষুধের মানের ব্যাপারে যে দেশগুলো আপসহীন হিসেবে পরিচিত, সেই ইউরোপ, আমেরিকায়ও রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। শিল্পের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ জোগাতে হবে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো ইন্ধনশক্তির সহজ জোগান নিশ্চিত করতে হবে।

জাহাজ নির্মাণশিল্পেও এগিয়ে গেছে দেশের বেসরকারি খাত। বিশ্বের বড় বড় দেশের জন্য জাহাজ তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। স্পেন, ফ্রান্স, ইতালির মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোও এখন বৃহদাকারের জাহাজ তৈরির জন্য বাংলাদেশে আসছে। আর সহজলভ্য ও সস্তা শ্রম, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাজার এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও মানুষের আয় বৃদ্ধির কারণে চীন, জাপান এমনকি ইউরোপের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ভারী শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এরই মধ্যে জাপানের অন্যতম গাড়ি ও মোটরবাইক নির্মাণ কোম্পানি হোন্ডা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক আরেক বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিকস কোম্পানি স্যামসাং বাংলাদেশে বিনিয়োগে আসার চেষ্টা করছে গত কয়েক বছর ধরে।

বিদেশি এসব কোম্পানির বাইরেও ইলেকট্রনিকস ও অটোমোবাইল শিল্পে নিজস্ব ব্র্যান্ডে সুনাম অর্জন করেছে ওয়ালটন ও রানারের মতো দেশীয় কোম্পানিগুলো। ওয়ালটনের ইলেকট্রনিকস পণ্য এখন দেশ ছেড়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। একইভাবে দেশীয় ব্র্যান্ড রানার অটোমোবাইলের তৈরি বাংলাদেশি মোটরসাইকেল এখন পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে রফতানি হচ্ছে। শিগগিরই আফ্রিকার দেশগুলোয় দেখা যাবে রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল। অটোমোবাইল শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে এরই মধ্যে বিশ্বের সুনাম অর্জনকারী গাড়ি (প্রাইভেট কার) নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার প্রোটন-সাগা বাংলাদেশের আরেক বৃহৎ শিল্প গ্রুপ পিএইচপির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে তাদের গাড়ি নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া চীনের জিলি, ইরানের সাইপা, ভারতের টাটা, বাজাজের মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে আসতে শিল্প-কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বড় শিল্পের পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পেও ঘটেছে এক ধরনের নীরব বিপ্লব। অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প। প্রতি বছর বাংলাদেশের জিডিপিতে কুটিরশিল্প ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার অবদান রাখছে। আর ১৭ লাখ কর্মক্ষম মানুষ প্রতি বছর এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ ও ভাগ্য উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প বিকাশে ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) যাত্রা শুরু হয়। এ সংস্থাটির দেওয়া তথ্যে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ক্ষুদ্রশিল্প ও ৮ লাখের বেশি কুটিরশিল্প আছে। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই হয়ে থাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বর্তমান বিশ্বে দারিদ্র্যদূরীকরণ, প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কুটিরশিল্পের মধ্যে আছে খাদ্যপণ্য, পানীয়, বস্ত্র ও ক্ষুদ্র পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, কাঠ ও আসবাব, মুদ্রণ, রাসায়নিক ও রাসায়নিক পণ্য, রাবার ও প্লাস্টিক পণ্য, মৌলিক মেটাল, ইলেকট্রনিকস চশমা, পরিবহন সরঞ্জাম, হস্তশিল্প, মেরামত কারখানা,

মৌমাছি পালন ও লবণশিল্প। সবচেয়ে বেশি কুটিরশিল্প গড়ে উঠেছে ঢাকা বিভাগে। দুই লাখ ৫০ হাজার ১১২টি। আর সিলেট বিভাগে কুটিরশিল্পের সংখ্যা সবচেয়ে কম।

মাত্র ২৭ হাজার ৭৯১টি। বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুটিরশিল্পে বছরে ৩৯ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার পণ্য উৎপন্ন হয়। মূল্য সংযোজিত হয় ৩১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার, যা জিডিপি বা দেশজ উৎপাদনে যোগ হয়। এর সবই হয়েছে বেসরকারি খাতের উদ্যোগে।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist