নুরউদ্দিন আহসান

  ১৫ মার্চ, ২০১৮

নিবন্ধ

পরিবেশের স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যই সব সুখের মূল। বাক্যটির যথার্থ প্রচলন রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যটা ঠিক রাখার জন্য যা যা থাকা দরকার তা আছে কি নাÑএ নিয়ে প্রশ্ন অনেক। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যটা ঠিক রাখার জন্য অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে প্রথমেই যে বিষয়টা প্রয়োজন তা হলো স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। তবেই বাক্যটার যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যাবে। সুন্দর পরিবেশ ভালো থাকার মূলমন্ত্র, যা প্রতিটি নাগরিকের জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে প্রতিটি নাগরিকের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিরাপত্তা বহন করে। কিন্তু আমরা কি সেই পরিবেশ পাচ্ছি? আমাদের চারপাশ বিবেচনা করলে বিষয়টা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। শহর এবং গ্রাম দুই স্থানেই এই প্রশ্ন সমভাবে প্রযোজ্য। জীবনের তাগিদে মানুষ আজ শহরমুখী। সংজ্ঞা যেন এমনÑস্বল্পপরিসরে অধিক মানুষের বসবাস যেখানে তার নাম শহর। সেখানে নাগরিক সুবিধা চাই থাকুক আর নাই থাকুক। সেটা দেখার বিষয় নয়। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেই হলো। সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পাওয়াটা তাদের কাছে এতটা জরুরি বিষয় নয়। আর যেখানে মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য দৌড়াচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পাওয়াটা সত্যিই হাস্যকর। তবু কি এর প্রয়োজন নেই? হ্যাঁ অবশ্যই আছে, দেহকে সুস্থ রাখতে হলে বা রাখতে চাইলে এই পরিবেশ ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। তবে পরিসংখ্যাটা আমাদের নেতিবাচক সংবাদই বহন করে। কেননা চাকরি সুবাদের হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, শহরের দিকে ধাবিত হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

জীবনের একটা গতিময়তা আনার জন্য তাদের এই পথ চলা। সুখের সেই মুধময়তা যেন শহরেই নিহিত রয়েছে। তবে সেই সুখের অমৃত পেয়ালায় সুখের পরিমাণটা কতটুকু আছে বা কতজন ভোগ করতে পারে তা দেখার বিষয়। তবু এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই হাজারো মানুষ শহরের কাছে থাকা সুখটাকে পেতে চায়। খুব কাছ থেকে দেখতে চায়। সে জন্যই শহরের দিকে ছুটে চলা। মানুষের এই ছুটে চলার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে শত বছরের পুরোনো, হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী প্রাণের শহর ঢাকা। শহরগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস। তবে সেখানে মানুষের তুলনায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ কতটুকু আছে তা বলা মুশকিল। যদি বলি, নেই বললেই চলে তাহলে ভুল হবে বলে মনে হয় না। কেন না এই শহর বিশ্বে দরবারে কয়েকবার অবসবাসযোগ্য শহর বলে খেতাব অর্জন করেছে। তবু কি আমরা এই বিষয়ে সচেতন হয়েছি? ঢাকা শহরের ময়লা ফেলার ডাস্টবিনগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় আমরা কতটা সচেতন।

দেখা যায়, অনেক ডাস্টবিনের ডাকনা চুরি হয়ে গেছে। না হয় ভেঙে পড়ে গেছে। না হয় ডাস্টবিনে ময়লা না রেখে পাশেই স্তূপ করে রেখেছি। পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার এই সামান্য প্রয়াসকেও আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। এর দায় কি আমরা জনগণ এড়াতে পারব? আরো অনেক সীমাবদ্ধতাও তো আছেই। তবে পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বলে সবার কাছে বিবেচ্য হলো গ্রামের পরিবেশ। যেখানে নেই কোনো কোলাহল। নেই শহরের শত শত যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া। নেই ধুলা-ময়লার ছড়াছড়ি। যেখানে রয়েছে সবুজে আবৃত্ত নির্মল পরিবেশ। যেখানে সবুজের দৃশ্যপটে চোখ দুটি শীতল হয়ে আসে।

কবি খুঁজে পায় কাব্যের উপকরণ, যা তার কলমের অনায়াসে এসে ধরা দেয়। সবুজের এই মহাসমারোহ মানবদেহের জন্য মহাওষুধ। কিন্তু আজ সেই পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। বিভিন্ন কারণে তা আজ স্বাস্থ্যকর থেকে অস্বাস্থ্যকর হতে যাচ্ছে। নিরাপদ স্থানগুলো অনিরাপদ স্থানে পরিণত হচ্ছে। দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না। যদিও কেউ থাকে, তিনি নিজের স্বার্থের কারণে নিশ্চুপ। যে বিষয়গুলো আমাদের এই নিরাপদ স্থানকে অনিরাপদ করে দিচ্ছে, তার মধ্যে ইটভাঁটা অন্যতম। আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো তা গড়ে উঠেছে। ব্যক্তির সুবিধামতো এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যেখানে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আইন আছে তবে সংবিধানের পৃষ্ঠার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ। প্রয়োগের ছিটাফোঁটাও সমাজে দৃশ্যমান নেই। আজ আইনের দুর্বলতার কারণে যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা ইটভাঁটার বিষাক্ত ধোঁয়া আমাদের নির্মল পরিবেশ গ্রামের সুবজে সমারোহকে দিনে দিনে বিলীন করে দিচ্ছে। শুধু কী তাই? এর জন্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি।

গ্রাম যেন তার প্রকৃত সৌন্দর্য হারাতে বসছে। অথচ এই প্রকৃতিই আমাদের জন্য সবচেয়ে আপন, স্বার্থহীন বন্ধু। যে শুধু দিতে জানে, নিতে জানে না। মেঘ, বৃষ্টি, খড়া সব ক্ষেত্রে সে সর্বদা মানুষের প্রয়োজনে বন্ধুপ্রতিম। স্রষ্টা যা মানুুষের কল্যাণার্থে সৃষ্টি করেছেন। যাদের ছাড়া মানুষের বসবাস পানিবিহীন মাছের বসবাসের মতো। আর মানুষের বেঁচে থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই নিঃসার্থক প্রকৃতির একটি জীবের কাছে রাখা হয়েছে, যা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা দায়। আর তা হলো অক্সিজেন, যা মানুষ বন্ধুপ্রতিম গাছের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। সেই নিঃসার্থক বন্ধু স্রষ্টার পরম সৃষ্টি, যা আজ আমাদের কিছু মানুষের স্বার্থের কাছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কারণে-অকারণে এই বন্ধুকে কেটে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো মিটিয়ে যাচ্ছি। যেখানে এই বন্ধুকে না কেটেও বিকল্প উপায়ে প্রয়োজন মেটানো যায়। সেখানে সামান্য প্রয়োজনে তাকে কেটে বিলীন করে দিচ্ছি। অথচ এরাই যে আমাদের পরম বন্ধু তা বুঝেও না বোঝার ভান করছি। স্বার্থের কাছে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব যেন অর্থহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, শিগগির এর চড়া মূল্য আমাদের দিতে হবে। এই একটু অচেতনতা পুরো জাতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। তাই জাতীয় স্বার্থে ব্যক্তি এবং সরকার উভয়কে বিষয়টা নিয়ে সচেতন হওয়া দরকার।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist