দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ০৯ মার্চ, ২০১৮

পরিবেশ

শিল্পনীতি শুধু কাগজেই

দেশের দ্রুত শিল্পায়নে জাপানের কিয়াসু দ্বীপের কৌশল অনুসরণ করে মহেশখালী ও মাতারবাড়ীকেন্দ্রিক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এ উদ্দেশে পুরো মহেশখালীকে একটি পরিকল্পিত শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। যেখানে থাকবে পৃথক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইকোনমিক জোন ও ট্যুরিজম পার্ক। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৪ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি শক্তিশালী কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দেশকে শিল্পসমৃদ্ধ করতে গত শতাব্দীর ষাটের দশকে জাপান যে ‘প্যাসিফিক বেল্ট’ নীতি গ্রহণ করে তারই উদ্যোগ হিসেবে দেশটির রাজধানী টোকিওর উত্তর দিক থেকে কিয়াসু দ্বীপের ওসাকা পর্যন্ত ১২০০ কিলোমিটার এলাকা শিল্পায়নের জন্য নির্ধারণ করা হয়। যেটি বাস্তবায়নের পর ১০ বছরে জাপানের মাথাপিছু জাতীয় আয় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

বর্তমানে প্যাসিফিক বেল্টে ১০টি বড় আকারের অর্থনৈতিক জোন রয়েছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। দেশটির মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশ আসে সেখান থেকে আর লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ওইসব কল-কারখানায়। সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী মহেশখালীকে একটি ট্যুরিজম শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সোনাদিয়া দ্বীপে একটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এ জন্য প্রায় ১০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা হবে। একটি জোন হবে মাতারবাড়ী এনার্জি হাব; যার পুরোটাই হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আরেকটি জোন হবে স্টিল মিল করার জন্য। মহেশখালী ও মাতারবাড়ীর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইকোনমিক জোনে শিল্প স্থাপনে উৎসাহী হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এই মহাপরিকল্পনা। পরিবেশবান্ধব এই শিল্পনগরী দেশের উন্নয়ন ক্ষেত্রে অনুকরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে। তাত্ত্বিক বিবেচনায় এ মহাপরিকল্পনার যৌক্তিকতা অনস্বীকার্য হলেও সঠিকভাবে এর বাস্তবায়নের ওপরই কাক্সিক্ষত সাফল্য নির্ভর করছে। এ বিষয়টি মনে রেখে সঠিকভাবে এবং যথাসময়ে তা যাতে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।

দেশের সমৃদ্ধির পাশাপাশি এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের জন্যও শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই এটা সবার জানা থাকলেও শিল্পায়ন তো আর সহজসাধ্য কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় শিল্পায়নের উপযোগী পরিবেশ। সঙ্গে জমি, রাস্তাঘাট বা ভৌত অবকাঠামো, বিদ্যুত ও জ্বালানি নিরাপত্তা, পুঁজির সহজলভ্যতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অন্য সুযোগ-সুবিধা। শিল্পাঞ্চলগুলো হতে হবে পরিবেশবান্ধব। থাকতে হবে জলাধার, সবুজ বৃক্ষরাজি, সুন্দর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশে পরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে না তোলায় সমস্যার পাহাড় জমেছে। কৃষি জমিতে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে বিনষ্ট করা হয়েছে পরিবেশ। বর্জ্য নদীতে ও জমিতে পড়ে উর্বরতা নষ্ট করে আসছে। দুর্বিষহ হচ্ছে জনজীবন। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান বাড়ানো জরুরী। যদিও সে লক্ষ্যে শিল্পনীতি করা হয়েছে। কিন্তু নীতি কাগজেই রয়ে গেছে। পরিবেশবান্ধব শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রটি তথাপি তৈরি হয়নি। বিনিয়োগকারীরাও নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না। তাছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশকে বিদেশি সাহায্য নির্ভর হিসেবে বহাল রাখার জন্য শিল্পায়নের প্রতি নজর দেওয়া হয়নি। ফলে নতুন নতুন কারখানা গড়ে ওঠেনি, পোশাক শিল্প ছাড়া। বর্তমান ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তৈরি করেছে নীতিমালা। তবে সরকার নিজে ব্যবসা করতে নয়, ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে চায়। দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত নীতির আলোকে সরকারি, বেসরকারি ও সমবায়ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এ দেশের আর কোনো মানুষ একটু ভালো কর্মসংস্থানের আশায় সাগরে ঝাঁপ দিয়ে কিংবা মরুভূমির তপ্ত বালুতে বেঘোরে প্রাণ হারাক তা চায় না শেখ হাসিনার সরকার। তাই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পরিকল্পিত উন্নয়নের পথ ধরেই সরকার অগ্রসর হতে চাইছে। ছোট হোক, বড় হোক শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলাটাই জরুরি। তারই একটি হচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বেজার তত্ত্ববধানে প্রাথমিকভাবে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০টি শিল্পাঞ্চলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি কেন্দ্রীভূত অঞ্চলে বিদ্যুত ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ কিংবা আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যত সহজ, বিচ্ছিন্নভাবে স্থাপিত শিল্পে তা করা মোটেও সহজ নয়। শিল্পাঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায় বলে এ খাতে ব্যয়ও অনেক কম হয়। আমরাও চাই দেশ অগ্রগতির সোপানে হোক ধাবমান, সমৃদ্ধ হোক শিল্পে, পাশাপাশি অক্ষত থাকুক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। শিল্পায়ন হোক দ্রুতগতিতে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist