ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
তার সঙ্গে দেখা হওয়াটাই বোধহয় একটি স্মরণীয় ঘটনা। যাদের এ সৌভাগ্য হয়েছে প্রকৃত অর্থেই তারা ভাগ্যবান। কেননা বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ মার্চ এমন একটি দিন, যে দিনকে স্মরণ করে এ দেশের প্রতিটি মানুষ উজ্জীবিত হয়। ’৭১-এর এই দিনে গোটা জাতি উজ্জীবিত হয়েছিল। হয়েছিল বলেই আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিতে পেরেছি। আর স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিতে পারার কারণেই দিনটির সঙ্গে প্রতিবছর আমাদের দেখা হয়, দেখা হবে। বারবার দেখা হবে। আমরা গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বলব, ‘ওই শোনো, কান পেতে শোনো-কাব্যময়তায় ভরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ’।
একটি জাতির বহু কাক্সিক্ষত গৌরবোজ্জ্বল দিন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল ইতিহাস। ইতিহাসের একটি শ্রেষ্ঠতম অংশ। লাখো বাঙালির ভালোবাসার নির্যাসে গড়া এক কণ্ঠশিল্পীর দরাজ কণ্ঠে উচ্চারিত শব্দাবলিÑ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। শিল্পী আর কেউ নন, আমাদের রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’৭১-এর এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে ঘোষণা করেছিলেন বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র। বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
সংশয়ে থাকা বাঙালির চোখে বঙ্গবন্ধু জ্বালিয়ে দিলেন অমর জ্যোতি। বক্তৃতায় তিনি আহ্বান জানালেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ তিনি আরো বললেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়,...আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি-তোমরা বন্ধ করে দেবে।... তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’
আমরা মুক্ত হয়েছি। স্বাধীন হয়েছি। পেয়েছি একটি অমর কাব্য। দীর্ঘ ৪৭ বছর পর সেই ভাষণ এখন বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় রাজনীতিতে এক কালজয়ী উপাখ্যান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২টি ভাষায় ভাষণটির অনুবাদ হয়েছে। এই ভাষণ আজ শুধু বাঙালি জাতির জন্যই নয়, বিশ্ব মানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল বা সম্পদ।
"