সোলায়মান মোহাম্মদ

  ০৭ মার্চ, ২০১৮

মতামত

ড. জাফর ইকবাল

হুট করে ঘুম থেকে উঠে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া কেউ কারো মাথায় ছুরিকাঘাত করবে বিষয়টা এ রকম না। কাউকে আঘাত করতে হলে অবশ্যই পরিকল্পনা কিংবা বেশ কিছুদিনের প্রস্তুতি লাগে। স্থানকাল পাত্রভেদে পরিকল্পনাটি কয়েক মাস অনেক সময় বড় কোনো বিষয় হলে বছর ধরেই হয়তোবা পরিকল্পনা করে থাকে দুষ্কৃতকারীরা। আর এ পরিকল্পনার পেছনে থাকে অবশ্যই কোনো না কোনো ব্যক্তির ইন্ধন। রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক-সংক্রান্ত বিষয় হলে থাকে রাজনৈতিক কোনো অপশক্তির দিকনির্দেশনাও।

হঠাৎ করেই খবর এলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল স্যারের ওপর অতর্কিত হামলা হয়েছে। মাথায় ছুরিকাঘাতের খবরটি শুনেই পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা। জাফর ইকবাল স্যারের ওপর হামলা এটা সাধারণ কোনো হামলা ছিল না। স্যারকে মেরে ফেলার জন্যই মাথায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো স্যারকে কেন মারতে চেয়েছে? তার সঙ্গে আর কে কে রয়েছে? মূল পরিকল্পনাকারী কে? লেখালেখিই কি তাহলে স্যারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে? এসব চিন্তা মাথার মধ্যে খুব করে ঘুরপাক খাচ্ছে। দিনেদুপুরে জনসম্মুখে এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছুরিকাঘাত বিষয়টি দেশের অন্য দশজনের মতো আমিও মেনে নিতে পারছি না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদও দিতে হয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে হামলাকারীকে ধরার জন্য। কিন্তু কথা থেকে যায় হামলার সঙ্গে একজন মাত্র দুষ্কৃতকারী কী করে জড়িত থাকে? মূল পরিকল্পনাকারীকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকারের বিষয়টি গভীরভাবেই দেখা দরকার।

স্যার শুধু শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না তিনি সমগ্র দেশের তথা এ জাতির শিক্ষক। সমাজ ও দেশের সব ধরনের অসংগতি নিয়ে রীতিমতো যিনি কলমের মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা চলে সমাজ থেকে রাষ্ট্র্রীয় পর্যায়ের সব অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলের বিরুদ্ধেই স্যারের সংগ্রাম। বিশেষ করে শিক্ষা খাতে স্যারের সীমাহীন ভূমিকা, একটি সুনিয়ন্ত্রিত, প্রযুক্তিগত ও নকলমুক্ত পরীক্ষা প্রক্রিয়া তৈরির পেছনে প্রতিনিয়তই লিখে চলছেন। যারা লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা সাধারণত মুক্তমনা ও স্বাধীনচেতা স্বভাবেরই হয়। লেখার সময় লেখকরা সাধারণত বিবেচনা করে না লেখাটি কার বিরুদ্ধে যাবে। স্যার সেই তালিকায় অন্যতম একজন। স্যারের লেখায় কখনো পক্ষপাতের ইশারাটুকুও পাইনি। অনেক সময় সরকার বাহাদুরের বিপক্ষেও স্যারের লেখা চলে গেছে, এমনকি সরকারপ্রধানের বিপক্ষেও।

এ পর্যন্ত মুক্তমনা অনেক লেখককেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানুষ স্বাধীনভাবে লেখবে এতেও এক শ্রেণির জ্ঞানপাপী মূর্খ জাহেলদের বংশরা লেখকের স্বাধীন মতপ্রকাশ করার দরজা চিরতরে ধূলিসাৎ করতে মরিয়া হয়ে কোমর বেঁধে নেমেছে। স্বাধীনতা মানে কি কারো শিখিয়ে দেওয়া বুলি আওড়ানো না পক্ষপাতহীন সঠিক চিন্তা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা। লেখকের লেখায় যদি কারো দ্বিমত থাকে, আর থাকাটায় স্বাভাবিক। তাহলে যার দ্বিমত আছে সেও লেখুক। দ্বিমত পোষণকারী নিজে লেখতে অক্ষম হলে ভাড়া করা লেখক দিয়ে লেখাক। ফুটবল খেলোয়াড়কে হারাতে হলে মাঠে নেমে ফুটবলই খেলতে হবে। তেমনই কোনো রেসারকে হারাতে হলে দৌড়াতে হবে। তা না করে যদি ওই ফুটবলার বা রেসারকে মেরে ফেলা হয় তাহলে কিন্তু প্রকৃত জয়ী বা সফলকাম যাদের মারা হয় তারাই হয়। কোনো লেখকের কথার উপযুক্ত জবাব দিতে হলে সেটা লেখেই দিতে হবে। সেটা না করে যদি লেখককে হত্যা করা হয় তাহলে সে যে ধর্মেরই থাকুক না কেন, তার কোনো ক্ষমা হওয়া উচিত নয়। ধর্মের সঙ্গে লেখক বা কোনো বক্তার কথা বা যুক্তির মিল না হলেই হামলা বা বোমা ফাটানো। আর এটিই হলো ধর্মওয়ালাদের সবচেয়ে বড় ভুল। ধর্মকে রীতিমতো ব্যবসার প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এ দেশের বহু নামিদামি লোক যাদের আমি সংক্ষেপে ধর্ম ব্যবসায়ী বলেই জানি।

সরকারের শেষ মেয়াদে এসে দেশের সুধীসমাজ বা লেখকদের হামলা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের এটি নতুন কোনো পাঁয়তারা নয়তো? দেশের প্রথম শ্রেণির লেখক, বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবক, ব্লগার ও অন্য অ্যাক্টিভিস্টরাও কি তাহলে হামলার আশঙ্কায় রয়েছে-সেটাও ভেবে দেখতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist