মোহাম্মদ আবু নোমান

  ০৪ মার্চ, ২০১৮

আন্তর্জাতিক

সভ্য গ্রহে হাবিয়া দোজখ

মৃত্যু উপত্যকা, দুনিয়ার নরক, ধর্ষণের বিনিময়ে খাদ্যÑএ রকম বহু বিশেষণ, আখ্যা, উপাধিতে অভিহিত হচ্ছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটি ঘৌতা এলাকা। আগুন, বারুদ, গুলি, রক্তের বন্যা, ধ্বংসস্তূপ আর নারকীয় বোমারু বিমানের পিলে চমকানো আওয়াজ হয়ে উঠছে এখানকার লাখ লাখ মানুষের নিত্যদিনের নিয়তি।

পৃথিবীর সমস্ত মানবতাবোধ, বিবেক আজ বিলীন। সিরিয়া এখন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মাস্তান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধের জুয়াড়ি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও রাশিয়ার প্রক্সিওয়ারে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা-রাশিয়া এমন এক জুয়াড়ি, বাজির শেষতলা না দেখা পর্যন্তÍ জুয়ার কোর্ট ছেড়ে ওঠে না। আমেরিকা চায় আসাদ সরকার উৎখাত করতে, টিকিয়ে রাখতে চায় রাশিয়া। পর্দার অন্তরালে রয়েছে কুমতলববাজরা। কিন্তু এর মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সিরিয়া, মরছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে সাজানো সুন্দর শহর। ঝগড়া করে আমেরিকা-রাশিয়া, আর লাশ পড়ছে সিরিয়া, মিসর, ইরাক, ইরান, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরে। এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য। ইরাক শেষ, আফগান, ফিলিস্তিন, আরাকান, লিবিয়ার পর এবার হবে সিরিয়া শেষ, পরবর্তী টার্গেট কোন দেশ, এ প্রশ্ন থেকেই যায়।

সিরিয়ার-পূর্ব ঘৌতায় দীর্ঘ মৃতের সারির সঙ্গে আক্রোশ থেকে বাদ পড়ছে না নারী ও শিশুরাও। হামলায় সেখানে রাসায়নিক ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহারের আলামত পাওয়া গেছে। এমনকি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দেউলিয়া সংগঠন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেইস পর্যন্ত বলেছেন, দামাস্কাসের কাছে পূর্ব ঘৌতা এনক্লেইভ এখন পরিণত হয়েছে ‘এই গ্রহের নরকে’। এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৬০০ নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৫০ শিশুও রয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা হয়তো এর দেড়-দুই গুণ। পুরো ঘৌতা ছিটমহলই এখন বিমান, কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এক বাছ-বিচারহীন লক্ষ্যবস্তু। এ যেন এক বিস্তৃত কবর। ক্লাস্টার বোমা, রাসায়নিক বোমা, কামানের বোমা, ড্রোনের বোমাসহ যত রকম বোমা আবিষ্কার করেছে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান, তার সবই প্রয়োগ হচ্ছে সিরিয়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যমগুলো ঢালাওভাবে অভিযোগ ও প্রচার করেছে বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের। যুদ্ধোন্মাদনা ছড়ানোর জন্যও সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার মিডিয়া। প্রতিটি পজিশনেই সাম্রাজ্যবাদের কাছে বোমা কিংবা মিশাইল যতটা গুরুত্বপূর্ণ, মিডিয়া তার থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি কখনো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ও তাদের পালিত করপোরেট মিডিয়ার খবরে জানানো হয়, সিরিয়া সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করছে উত্তর কোরিয়া। কিম সরকারের পারমাণবিক বোমা বানানোয় সক্ষম ব্যক্তিরা নাকি বেশ কয়েকবার সিরিয়া সফর করেন। প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, উত্তর কোরিয়া থেকে আসা ওই ব্যক্তিরা পারমাণবিক বোমা বানানোর কেউ নন। তারা ক্রীড়া প্রশিক্ষক।

জাতিসংঘ ও অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় ত্রাণ বিতরণের সময়ও নারীরা যৌনতায় বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত অমানবিক এবং হৃদয়বিদারক। ত্রাণকর্মীরা বলেছেন, যৌন শোষণ সেখানে এতটাই ব্যাপক, কিছু সিরিয়ান নারী ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে যেতেই চান না। কারণ তাহলে লোকে ভাববে যে তারা দেহদান করে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছে।

সাদ্দামের হাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকুক বা না থাকুক, টুইন টাওয়ার ধ্বংসের অকাট্য প্রমাণ না থাকলেও ধ্বংস হলো আফগান-ইরাকের লাখো শিশুর জীবন ও ভবিষ্যৎ। লিবিয়ায় বিমান হামলা করল ফ্রান্স আর ব্রিটেন, হত্যা করা হলো গাদ্দাফিকে। আসাদ, গাদ্দাফি, সাদ্দাম যদি স্বৈরাচারী হয়ে থাকে এর বিচার তার দেশের জনগণ করবে; কিন্তু সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে কি? সিরিয়ায় গণতন্ত্র, নির্বাচন, কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসনে কোনো বিদেশি মাতবর আসার দরকার নেই। জনগণকে সুযোগ দিলে তারাই নিজেদের ভাগ্য তৈরি করে নিতে পারে। বিপ্লব যেমন রফতানি করা যায় না, ঠিক তেমনি গণতন্ত্রও বিদেশ থেকে আমদানি করা যায় না।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist