ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

মতামত

সড়ক দুর্ঘটনা ও আমরা

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান কারণ হচ্ছে সড়কে বিশৃঙ্খল চলাচল এবং আইনকানুন না মানা। অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল, একই রাস্তায় দ্রুত ও ধীরগতির যানবাহনের একত্রে চলাচল, অদক্ষ গাড়িচালক, সড়কের দুরবস্থার কারণে আজ সড়ক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। মৃত্যুর পাশাপাশি বাড়ছে পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও।

শুধু গাজীপুরেই গত তিন মাসে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩০ জন, গুরুতর আহত হয়েছে আরো অনেকে। গত সোমবারও রাজশাহীতে দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। আগের দিন রোববারও নীলফামারীর সৈয়দপুরে তিন মোটরসাইকেল আরোহী এবং নাটোরে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। এটিও একটি উদ্বেগের বিষয়। দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি এখন মূলত তরুণ শ্রেণির বাহন হয়ে উঠেছে। অথচ যত দুর্ঘটনা ঘটে তার একটি বড় অংশ দখল করে থাকে এই মোটরসাইকেল। এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে দেখতে হবে এবং প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নিষিদ্ধ হলেও এখনো অনেক চালককেই মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। যেকোনো মূল্যে এটি বন্ধ করতে হবে। অদক্ষ চালকরা যেন লাইসেন্স না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন রাস্তায় নামতে না পারে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। পথচারীদের রাস্তা পারাপারেও শৃঙ্খলা আনতে হবে। জানা যায়, লেগুনা, হিউম্যান হলার, টেম্পো বা এ ধরনের কিছু গাড়ির চালকদের বেশির ভাগেরই লাইসেন্স থাকে না। অপ্রাপ্ত বয়স্করাও এসব গাড়ি চালায়। এমনকি খোদ রাজধানীতেও এদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। অভিযোগ আছে, পুলিশকে নির্ধারিত দৈনিক অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে এরা গাড়ি চালায়। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নসিমন, করিমন, টমটম, ভটভটি ইত্যাদি নামের কিছু যানবাহন ইদানীং মহাসড়কেও চলতে দেখা যায়, যেগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি এবং ইঞ্জিনগুলো যানবাহনেরই নয়। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। সাম্প্রতিক সময়ে এই যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। অথচ কোনো এক অদৃশ্য কারণে এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক সময় বাসও দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে। অভিযোগ আছে, গাড়ি চালাতে না জানলেও শুধু কিছু টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স পাওয়া যায়। এমন ভয়ংকর দুর্নীতি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। জীবন ধারণের একান্ত প্রয়োজনেই মানুষকে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করতে হয়। এটা কোনোভাবেই মৃত্যুফাঁদ হতে পারে না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট দুর্ঘটনার কারণ-সংক্রান্ত পুলিশি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলেছে দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। আর চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ঘটে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা। পরিবেশ-পরিস্থিতিসহ অন্য কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ ১০ শতাংশ। ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার ৪৩ শতাংশই ঘটছে জাতীয় মহাসড়কগুলোয়। প্রতিদিনই সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। স্বজন হারানো মানুষের বুকফাটা আর্তনাদও বেপরোয়া যানবাহন চালকদের মনে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারছে না। যানবাহন চালকদের অদক্ষতার কারণেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২ হাজার ৩৯৪ জনের। আর যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে এই সংখ্যা আট হাজার। দেশে যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিআরটিএ সারা দেশে ১০২টি চালক প্রশিক্ষণ স্কুলের নিবন্ধন দিলেও এগুলোর কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। লাইসেন্স পেতে যে প্রশিক্ষণের দরকার, তা এসব স্কুল থেকে পাওয়ার কথা হলেও বাস্তবে ড্রাইভিং স্কুলের বেশির ভাগেরই হদিস নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে প্রশিক্ষণ স্কুলের প্রশিক্ষণ কোনো গুরুত্বই পায় না।

তা ছাড়া ফিটনেসহীন যানবাহনের চলাচলও সড়ক ব্যবস্থাপনাকে তছনছ করে দিচ্ছে। ফিটনেস সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রেও চলে লাগামহীন উৎকোচ। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে এসব অব্যবস্থার রাশ টেনে ধরার পাশাপাশি পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist