পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি
শঙ্কা নিয়েই এগোচ্ছিল দেশের পুঁজিবাজার। তবে দীর্ঘমন্দা কাটিয়ে কিছুটা চাঙাভাব দেখে অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছিলেন। হয় তো এবার সার্বিক অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে, কিন্তু হলো না। পোড়খাওয়া বিনিয়োগকারীরা আবারও পড়ল কঠিন ঝুঁকিতে। সেই সর্বনাশের চূড়ান্ত চিত্র দেখা গেল গত রোববার। দু’দিন বন্ধ থাকার পর বড় ধরনের সূচকের পতন হয়েছে দেশের পুঁঁজিবাজারে। রোববার দুই বাজারেই একই চিত্র বিরাজমান ছিল। ২০১০ সলের মহাধসের পর দেশের পুঁজিবাজারে এত বড় পতন আর হয়নি। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩৩ পয়েন্ট। আর সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স কমেছে ২৪৩ পয়েন্ট। মূলত, ঋণের লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ আমানতের অনুপাত কমানোর পর থেকেই দেশের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক আতঙ্ক। সব মিলিয়ে একটি ক্রান্তিকালের মধ্যে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এডিআর কমানোর কারণে অনেক ব্যাংকের ঋণ বিতরণে সমস্যা হবে। ফলে ব্যাংক আবার উচ্চ সুদে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করবে। বেড়ে যাবে আমানতের সুদের হার। সে সঙ্গে কমে যাবে অর্থের প্রবাহ। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দেয় গভীর আতঙ্ক। যার নগ্ন খেসারত পুঁজিবাজারের এই দরপতন। এর আগে দেশের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ২০১০ সাল থেকে বিরাজমান মন্দাবস্থা থেকে পুঁজিবাজার যেভাবে বেরিয়ে এসেছে, ঠিক এ প্রক্রিয়াটি যাতে সুস্থ ধারায় থাকে সেজন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির বিষয়টিকে জরুরি বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এর ব্যতিক্রম হলে অতীতের মতো এবারও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই আশঙ্কাই বাস্তবে প্রতিফলিত হলো। ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত হতে পারল না দেশের পুঁজিবাজার। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের দুটি বড় বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীরা। এবারও যদি তাদের সেই লোকসানের ঝুঁকিতে পড়তে হয় তা হলে এর দায় বহন করবে কারা? বড় বড় ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বছরজুড়ে দাপিয়ে বেড়ালেও স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীদেরই শেয়ারবাজারের প্রাণ বলে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য নিশ্চিত রয়েছে আইনি ও আর্থিক সুরক্ষা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশ্বাসযোগ্য পর্যাপ্ত তথ্য তাদের কাছে সহজলভ্য। যৌক্তিক ফি দিয়ে পেশাদার বিশ্লেষকদের কাছ থেকে তারা পরামর্শ নিতে পারেন। এর পরও বাজারে কোনো কারসাজি বা পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যদি পুঁজি হারায়, তাদের জন্য রয়েছে বীমার মতো আর্থিক সুবিধা। যা আমাদের দেশে নেই। ফলে সর্বস্ব হারিয়ে কঠিন অবস্থার মোকাবিলা করতে হয় এদেশের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।
২০১০ সালের ধসের পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠিত হয়েছে। বাজারে সংস্থাটির তদারকি বাড়ার ফলে বড় ধরনের ভরাডুবির ঝুঁকি অনেকখানি কমেছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আংশিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে, তবে এটি সবার কাছে পৌঁছেনি। এছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর যেসব অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার কারণে কারসাজি চলছে, তা চিরতরে বন্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান। আমরা আশা করি, দ্রুত এ আইন কার্যকর হবে। আর হঠাৎ করে বাজার ধসের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
"