সাবরিনা শুভ্রা

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

নিবন্ধ

তারুণ্য কেন বিপথগামী

তরুণ ও যুবসমাজই দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ। এরাই জয় করে অজেয়। অসম্ভবকে করে তোলে সম্ভব। বহু কবি তারুণ্যের সম্ভাবনাকে স্বপ্নময় করে অনেক কবিতা-গান রচনা করেছেন। তরুণদের ওপর ভরসা করেই সমগ্র দেশ ও জাতি বুক বেঁধে থাকে। অভিভাবক যেমন তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, রাষ্ট্রও তেমনই তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ নেয়। সমাজপতি, ব্যবসায়ী, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ সবাই তরুণদের যথাযথভাবে গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করেন, প্রতিষ্ঠান গড়েন।

দেশ ও জাতির সোনালি স্বপ্নকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনেক স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারি ও বেসরকারি মিলে দেশে এখন ১৩২টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য হাসিলের অভিযোগ উঠলেও ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা যায় না। অর্থাৎ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে সব না হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে। তাই সবাই ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনা করে স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসেছেন এমন ধারণা পোষণ হবে অবিবেচনাপ্রসূত। তবে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাসহ আরো অনেক সমস্যা বহু প্রতিষ্ঠানেই রয়েছেÑএ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

প্রায় ১০০-এর কাছাকাছি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বর্ষে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এসব প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফিসহ অন্যান্য ব্যয়াদিও বিপুল। শুধু ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাই নয়, অনেক মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েও বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এ জন্য অনেক অভিভাবককে জায়গাজমি, ভিটেমাটিসহ সবকিছু বিক্রি করে প্রায় ফতুর হতে হয়। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই মেধাবীও। এদের অনেকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে অসাধারণ কৃতিত্বও দেখিয়েছে। এতে বোঝা যায়, তরুণরা সুযোগ-সুবিধা পেলে অনায়াসে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম। তাই পাবলিক ভার্সিটিতে অনেক ভর্তুকি দিয়ে এদের যেমন পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়, তেমনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রাণান্ত চেষ্টা করে অনেক অভিভাবক সন্তানদের লেখাপড়া করান।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ধনাঢ্য ঘরের সন্তানদের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাস ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরই কয়েকজন জঙ্গি তৎপরতা চালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর অ্যাকশনে নিহত হয়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনের ছোটাছুটি ও সাফল্যের উন্মাদনায় মানুষকে দিন দিন যন্ত্রে পরিণত করছে। এই সন্তানদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর সেই সময়টুকুও আজ যেন অভিভাবকদের হাতে নেই। কিন্তু পরিবারে দেওয়া সামান্য সময়টুকু একটি পরিবারকে আসন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারের প্রতিটি সন্তান আমাদের অমূল্য সম্পদ। এই সন্তানদের প্রতি আমাদের (বাবা-মাদের) উদাসীনতার কারণে আজ তারা বিপদগামী হচ্ছে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণির ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী এবং যাদের মদদদাতা হিসেবে রয়েছে কোনো না কোনো পরাশক্তি। ওরাই আমাদের আদরের সন্তানদের ব্রেন ওয়াশ করে জঙ্গিতে পরিণত করে তাদের দিয়ে রক্তের হোলিখেলায় নিয়োজিত করছে। এখনো সময় আছে, বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে আমরা আমাদের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি দেই। কেমন আছে আমার সন্তান? সময়, পরিবেশ-পরিস্থিতি, আধুনিকতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির আগ্রাসন আমার সন্তান কতটুকু পজেটিভভাবে গ্রহণ করছে, না এর অপব্যবহারের শিকার হয়ে বিপথগামী হচ্ছে। তা সন্তানের বাবা-মা বা অভিভাবককে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক তৈরি করে তাকে সময় দিতে হবে। দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। চাল-চলন বা আচার-ব্যবহারে কোনো রকম অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলে তার সঙ্গে শেয়ারিং করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি বাবা-মা বা অভিভাবককে এই দায়িত্ব নিতে হবে।

আমাদের সমাজে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে বখে যাওয়ার কারণ তাদের মা-বাবার দায়িত্বজ্ঞানহীন অসচেতনতা। তাই একজন সচেতন অভিভাবকের কর্তব্য সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, মিথ্যা কথা বলে কোনো বখাটের সঙ্গে মেলামেশা করছে কিনাÑসে বিষয়ে সর্বদা খোঁজ রাখা এবং একই সঙ্গে সমাজ নির্মাণকারীদের দায়িত্ব হলো সমাজকে তরুণদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। সম্ভবত এ দেশে এ কাজটি করতে নির্মাণকারীরা পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছেন। যেখান থেকে বেরিয়ে আসাটাই এখন সময়ের দাবি।

লেখক : গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist