যত উন্নয়ন তত দুর্নীতি!
যত উন্নয়ন তত দুর্নীতি। এ যেন আত্মার সঙ্গে প্রেতাত্মার সম্পর্ক। দুর্নীতি নিয়ে বলতে বা লিখতে এখন বোধহয় কারো আর ভালো লাগার কথা নয়। তবুও লিখতে হয়, বলতে হয়। এ যেন এক গতানুগতিক প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে মিডিয়া ও মিডিয়া জগতের মানুষেরা বেঁচে আছে। এ যেন কেবলই বেঁচে থাকা। যে বেঁচে থাকার মাঝে কোনো গৌরব নেই। নেই কোনো নান্দনিক বোধের অনুশীলন।
এ যাবৎ দুর্নীতির প্রশ্নে কম লেখালেখি হলো না। মিডিয়ায় এমন কোনো দিন নেই যে, কোনো না কোনো দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে না। কিন্তু ফল কখনো ইতিবাচক পথে উঠে আসতে পারেনি। একে শুধু ব্যর্থতা বললে ভুল বলা হবে। প্রকৃত অর্থে এ যেন সমাজের বিকৃত চিন্তার অবধারিত ফসল। যাকে অনেকে সামাজিক অবক্ষয়ও বলে থাকেন। কিন্তু কেন এ অবক্ষয়? এ ব্যাপারেও অনেকে অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা বা পরামর্শে দুর্নীতির অবস্থানকে টলানো যায়নি। ক্রমশই এর মাত্রা বেড়েই চলেছে।
কয়েক দিন আগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়ন কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার নিয়ে তোলপাড় শেষ হতে না হতেই এবার ড্রেন নির্মাণে সিমেন্টের বদলে মাটির ব্যবহার হতে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করল দেশবাসী। বাঁশের ব্যবহার ছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর মাটির ব্যবহার খোদ রাজধানী শহর ঢাকাতেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদবাগ ন্যাশনাল ব্যাংকের নিচে ড্রেন নির্মাণে সিমেন্টের বদলে কাদামাটি সংযোগে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে এর প্রতিক্রিয়া হলেও যারা এ কাজ করেছেন অথবা পরোক্ষে যারা এ কাজে সহযোগিতা জুগিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া হয়েছে কি না জানা না গেলেও নির্দ্বিধায় বলা যায়, ওদের কোনো টেনশন নেই। অন্তত এ ব্যাপারে। ওরা বেশ ভালো করেই জানেন, ওদেরকে স্পর্শ করার ক্ষমতা কারো নেই। নেই বলেই ওরা এতটা বেপরোয়া হতে পেরেছেন।
আমরা মনে করি, অপশক্তির এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসনকে রুখে দেওয়ার জন্য, দুর্নীতিকে নির্বাসনে পাঠানোর প্রশ্নে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সম্ভবত এই সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কিছুতেই শিকড়সহ দুর্নীতির মূলোৎপাটন আজ আর সম্ভব নয়। আর এ দেশের মানুষ সেই সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে আছে।
"