সাবরিনা শুভ্রা
শিক্ষা
দেশের জন্য বোঝা
কোনো জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক, এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কেননা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে জাতি তাদের জীবনে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছে, সেই জাতির জীবন হয়েছে ততই উন্নত। কথায় আছেÑ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদ-’। এ কথা বিবেচনায় রেখে এটা বলা যৌক্তিক যে, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এর সঙ্গে সঙ্গে এটাও বাস্তব, দেশের বেশির ভাগ পরিবারই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাই সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে যেন আর্থিক দৈন্যের কারণে কোনো শিশু ন্যূনতম শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হয় কোনোভাবেই। আর তা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল জাতির সত্যিকারের উন্নতি অর্জন সম্ভব হবে।
শিশুদের স্কুলমুখী করার নানা রকম সরকারি পরিকল্পনা সত্ত্বেও প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলের উপযুক্ত ৫৬ লাখ শিশু এখনো স্কুলের বাইরে। এ শিশুদের একাংশ জীবনে কখনো স্কুলে যায়নি এবং অন্য অংশ স্কুলে ভর্তি হলেও ঝরে পড়েছে। বাংলাদেশে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুর হার ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি তবে পাকিস্তানের চেয়ে কম। ইউনিসেফ ও ইউনেসকোর এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিশু শিক্ষায় বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। ছাত্রবৃত্তি বাড়ানো হয়েছে ব্যাপকভাবে। তার পরও দেশের ৫৬ লাখ শিশু স্কুলের বাইরে থাকা নিঃসন্দেহে জাতীয় লজ্জার ঘটনা। প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বয়সী শিশুর সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ। এর ৫৬ লাখই স্কুলের বাইরে। সোজা কথায় স্কুলে যাওয়ার বয়সী ১৬ দশমিক ২ শতাংশ শিশু বাইরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে নিম্নমাধ্যমিক বয়সী ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এ হার ৫ দশমিক ৭ ও ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক, এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কেননা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে জাতি তাদের জীবনে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছে, সেই জাতির জীবন হয়েছে ততই উন্নত। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে যেন আর্থিক দৈন্যের কারণে কোনো শিশু ন্যূনতম শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হয়। আর তা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল জাতির সত্যিকারের উন্নতি অর্জন সম্ভব হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বর্তমান সরকার শিশু শিক্ষায় বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। ছাত্র বৃত্তি বাড়ানো হয়েছে ব্যাপকভাবে। এর ফলে আগামীতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে, তার পরও দেশের লাখো শিশু স্কুলের বাইরে থাকা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। আজ যারা শিক্ষাবঞ্চিত হবে একদিন তারাই দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে। এমনকি যদি দেশে শিক্ষার হার আশানুরূপ না হয় এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশই বঞ্চিত থাকে, তবে তার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। সব নাগরিকের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারের যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপেই শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হবেÑএমনটি প্রত্যাশিত।
আমরা মনে করি, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য দূরীকরণ একটি প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া অভাবের দায়ে আইনগত বিধিনিষেধ থাকার পরও শিশুশ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়। ফলে তারা স্কুলে না গিয়ে জীবিকার তাগিদে ভারী ভারী কাজ করছে এক রকম বাধ্য হয়েই। কাজেই বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে এসব সমস্যার সমাধান ও ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের আরো বেশি সুদৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : গবেষক, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
ংযাঁৎধধ৭@মসধরষ.পড়স
"