জামাল জাহেদ
উদ্যোগ
ডেইরি ফার্ম ও দুই সহোদর
নবসৃষ্ট কর্ণফুলী উপজেলায় ২০১২ সালে ২০টি গরু নিয়ে উপজেলার ফকিরন্নির হাট এলাকার সৌদি প্রবাসী নাছিরের অর্থায়নে ছোট ভাই সৌদিয়া ডেইরি ফার্ম নামে খামার গড়ে তোলেন, যা পুরোপুরি ২০১৪ সালে রূপ নেয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আকাক্সক্ষা ও নিজেকে দেশে স্বাবলম্বী করার অদম্য চেষ্টায় মাত্র কয়েক বছরে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান এই দুই সহোদর। বনে যান কোটিপতি।
তাদের ফার্মে বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির ১০০টি গরু রয়েছে। সবকটি গরুর জাত নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার হলেও দেশি জাতের রয়েছে মাত্র পাঁচটি। যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকার ওপরে। দৈনিক ৫০০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। যার বাজারমূল্য ৫১ টাকা হিসাবে দৈনিক ২৫ হাজার ৫০০ টাকা। মাসে আয়ের খাতায় যোগ হয় ৭ লাখ ৬৫ হাজারের মতো। এ ছাড়া ১৮ কর্মচারীদের বেতনভাতাও জমির ভাড়া পরিশোধ শেষে তাদের মাসিক আয় হয় কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা। দুই সহোদর নাছির ও সেলিমের গড়ে তোলা ডেইরি ফার্মের উৎপাদিত দুধ বিক্রির স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয়। যদিও একই উপজেলায় সরকারের মিল্ক ভিটা দুগ্ধজাত প্রক্রিয়াকরণ খামারের কাজও পুরোদমে চলছে।
নবসৃষ্ট কর্ণফুলী উপজেলার শাহমিরপুর ফকিরন্নির হাট রাস্তার মাথা এলাকার যুবক মো. সেলিম ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। আর পড়ালেখা হয়নি। পরে বেকার জীবনে চাকরি না করে ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা দেখা দেয় তার মধ্যে। পরের অধীনে নয়। প্রথমে শখের বসে ডেইরি ফার্মের চিন্তা। পরে নিজের কাজ নিজেই করে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সাধনায় প্রবাসী ভাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। সৌদি প্রবাসী বড় ভাই নাছিরও পরে সুর মেলান। শখের বসে সেলিম ফকরিন্নির হাট গ্রামে ভাড়া করা ১৩ গ-া জমির ওপর গরুর খামার গড়ে তোলেন।
তিনি মাত্র ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ২০টি ফ্রিজিয়ান গরু কেনেন এবং তা নিয়ে খামারের যাত্রা করেন। দেখতে দেখতে সাত বছর চলেছে দুই সহোদরের ডেইরি ফার্মের বয়স। ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ ফার্মে ফ্রিজিয়ান ও হালস্টাইন ফ্রিজিয়ান অস্ট্রেলীয় জাতের ১০০ গরু রয়েছে। যার মধ্যে ৭৩টি গরু প্রতিদিন ৪০০ লিটার দুধ দিচ্ছে আরো ২৭টি গরু আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে দুধ দেবে। বাকিগুলো বাচ্চা রয়েছে।
জানা যায়, গরুগুলোসহ ফার্ম দেখাশোনার জন্য একজন ম্যানেজারসহ ১৮ কর্মচারী রয়েছেন। উৎপাদিত দুধ প্যাকেটে করে শহরের বিভিন্ন মিষ্টির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কনফেকশনারি ফুলকলি, মধুবন, হরলিক্সসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া মাংসের জন্য গরু বিক্রি, গোবরসহ ঘাস বিক্রি করে প্রতি মাসে এ খামার থেকে বাড়তি আয় করেন। খামারের বায়োগ্যাস দিয়ে চলছে তাদের পরিবার। পরে ৩০ পরিবারকে বৃদ্ধি করার কথাও জানান। এ ছাড়া কর্ণফুলীতে ছোট-বড় অনেক খামার রয়েছে যাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রিতে সমস্যা হচ্ছে। সবাই সরকারের সুনজর প্রত্যাশা করেন।
এ উপজেলায় সরকারিভাবে মিল্ক ভিটার মাধ্যমে বিলিং সেন্টার নির্মাণ হলেও দুধ বিক্রির সমস্যার সমাধান হয়নি। আগামীতে পূর্ণাঙ্গ মিল্ক ভিটার সেন্টার গড়ে উঠলে এসব সমস্যার সমাধা হবে। এ ছাড়া আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ ফান্ডের মাধ্যমে খামারবাড়ি ও ফার্মের ব্যবসা আরো প্রসার ঘটানো প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কারণ ব্যাংকের সহায়তায় বেকাররা কর্মসংস্থান খুঁজে পাবেন।
এমন নিয়ম বাস্তবায়িত হলে দেশে বড় বড় খামার তৈরি হবে। শিক্ষিত বেকার যুবকরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। মাদকের কালো থাবায় পতিত না হয়ে সাধ্যমতো ব্যবসায় আত্মনির্ভর হতে সবার চেষ্টা করা জরুরি মনে করছে।
অন্যদিকে নাছির প্রবাস জীবনে নয়, বরং প্রবাস থেকে দেশে ফিরেই আলোর মুখ দেখেছেন। সঙ্গে ভাইকেও স্বনির্ভর করে গড়ে তোলেছেন। আমরা মনে করি, ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই সাফল্য পাওয়া যায়। লেখাপড়া বেশি করতে পারেনি মো. সেলিম। বেকারত্ব নয়, বরং নিজ কর্মই বদলে দেবে মানুষের জীবনÑএমন চিন্তা থেকেই চেষ্টা করেছেন ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার।
লেখক : সাংবাদিক
"