ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮

পরিবেশ

বাসযোগ্য হোক ঢাকা

পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু পানির দেশ বলে পরিচিত বাংলাদেশের রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানি অকল্পনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওয়াসার পানির মান যেমন প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়, তেমনি জার ও বোতলের পানিও প্রতারণার উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের তীব্র সংকট রাজধানীর গৃহিণীদের জন্য সাক্ষাৎ মাথাব্যথার বলে বিবেচিত হচ্ছে। দিনের বেলায় রান্না করা বহু এলাকায় এখন অসম্ভব ব্যাপার। ধূলিময় বায়ুর কারণে ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ বায়ুদূষণের নগরীর তকমা অর্জন করেছে একাধিক জরিপে।

যানজট তো ঢাকার দেড় কোটি মানুষের জন্য নিত্য বিড়ম্বনার নাম। রাজধানীবাসীর প্রতিদিনের ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা কেড়ে নিচ্ছে যানজট নামের নিত্যকার অভিশাপ। রাজধানীবাসীর সেবার জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দায়বোধের মনোভাব না থাকায় ক্রমান্বয়ে এ মেগাসিটি বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হচ্ছে। রাজধানীর রাস্তাঘাটের নোংরা অবস্থায় সংশয় হয়, এ নগরীতে এসব দেখার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কিনা। উন্নয়নের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিত্যকার ঘটনা বলে বিবেচিত হচ্ছে।

উন্নয়নকাজ সময়মতো সম্পন্ন না হওয়ায় বছর জুড়ে চলছে সীমাহীন ভোগান্তি। সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এক সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ না হতেই একই রাস্তা আবারও খুঁড়ে চলে অন্য সংস্থার কাজ। রাজধানীর জলাশয়গুলো দূষণের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে একদিকে নাগরিক সচেতনতা, অন্যদিকে কর্তৃপক্ষীয় নজরদারির অভাবে। সব মিলিয়ে রাজধানীকে অচল নগরীর দিকে ঠেলে দিতে যেন একজোট হয়ে কাজ করছেন তথাকথিত দায়িত্বশীলরা। দুনিয়ার মেগাসিটিগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে ঢাকা সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। অথচ নজরদারি কর্তৃপক্ষগুলো একটু দায়িত্বশীল হলে বিদ্যমান সমস্যার বেশির ভাগেরই ইতি টানা সম্ভব। রোধ করা সম্ভব অসহনীয় যানজট ও পরিবেশদূষণের সমস্যা। নগর জীবনের ভোগান্তি কমাতে সরকারের সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও নজরদারির ঘাটতি থাকায় সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এ অকাম্য অবস্থার দ্রুত অবসান কাম্য। রাজধানীকে বাসযোগ্য করে তুলতে নগর সরকার গঠনের বিষয়ে ভাবতে হবে। সেবাদানকারী সব সংস্থাকে নিয়ে আসতে হবে এক ছাতার নিচে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। চার দশকেরও পুরোনো এ মহানগরীর শুরু হয়েছিল মুঘল আমলে সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে। কালের বিবর্তনে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের তীরবর্তী ঢাকা এখন দুনিয়ার শীর্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নগরগুলোর একটি। দেড় কোটিরও বেশি অধিবাসীর বসবাস এ মেগাসিটিতে। মেগাসিটি হিসেবে ঢাকার উত্থান বাংলাদেশের মানুষের জন্য যেমন গর্বের তেমন যানজট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা এই গর্বকে প্রতিনিয়ত আহত করছে। ইংল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এক জরিপ চালিয়ে বিশ্বের ১৫০টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ এবং কম দুর্ভোগের ১০টি করে শহরকে চিহ্নিত করেছে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভোগের নগরীর তালিকায় প্রথম হয়েছে ইরাকের বাগদাদ, দ্বিতীয় আফগানিস্তানের কাবুল, তৃতীয় নাইজেরিয়ার ল্যাগোস, চতুর্থ সেনেগালের ডাকার, পঞ্চম মিসরের কায়রো, ষষ্ঠ ইরানের তেহরান, সপ্তম বাংলাদেশের ঢাকা, অষ্টম পাকিস্তানের করাচি, নবম ভারতের নয়াদিল্লি আর দশম ফিলিপাইনের ম্যানিলা। আর নাগরিকদের ভালো জীবনমানের স্বস্তিদায়ক শহরের তালিকায় প্রথম হয়েছে জার্মানির স্টুটগার্ট।

এ তালিকায় জার্মানির চারটি শহরের নাম এসেছে। দ্বিতীয় হয়েছে লুক্সেমবার্গের লুক্সেমবার্গ সিটি, তৃতীয় জার্মানির হ্যানোভার, চতুর্থ সুইজারল্যান্ডের বার্ন, পঞ্চম জার্মানির মিউনিখ, ষষ্ঠ ফ্রান্সের বরডিউঙ, সপ্তম যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ, যৌথভাবে নবম হয়েছে অস্ট্রিয়ার গ্র্যাজ ও জার্মানির হামবুর্গ। ঢাকা যে বিশ্বের অন্যতম দুর্ভোগের শহর তা এ মহানগরীর যানজটেই স্পষ্ট। নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে যানজটের কারণে যে সময় লাগে বিমানে সে সময়ে অন্য দেশ থেকে ঘুরে আসা যায়। ট্রাফিকব্যবস্থা বলে এ মহানগরীতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা সে সংশয়ের অবকাশও রয়েছে। দুনিয়ার আর কোনো শহরে ফুটপাথ ও রাজপথ দখল করে দোকানপাট সাজানো, গাড়ি পার্কিং কিংবা জনসভা করা হয় কিনা তা আমাদের খুব বেশি জানা নেই। বাংলাদেশকে সবুজের দেশ বলা হলেও রাজধানী ঢাকা থেকে সবুজ গাছগাছালি দিন দিন উধাও হচ্ছে। নাগরিকদের সেবাদানের নামে বছর জুড়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলে এ মহানগরীতে। পরিবহনব্যবস্থার হতশ্রী অবস্থাও প্রতিনিয়ত পীড়া দেয় নগরবাসীকে, যা ঢাকাকে সাক্ষাৎ দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত করেছে। এ অভিধা গর্বের নয়, লজ্জার। এ লজ্জা থেকে রক্ষা পেতে সরকার ও দুই সিটি করপোরেশনকে যেমন যতœবান হতে হবে, তেমন নাগরিকদের সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist