সমস্যার সমাধান প্রয়োজন
ক্যানসার একটি মরণব্যাধি। দেশে ভয়ানক হারে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের চিকিৎসায় দেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলেও রোগীর তুলনায় শয্যাসংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ফলে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যবান্ধব এ সরকারের কাছে মানুষের বিপুল প্রত্যাশা। স্বাস্থ্য খাতে সরকারকে যেন নতুন ঝুঁকিতে পড়তে না হয়। বিশেষ করে দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এর সুচিকিৎসা ও প্রতিরোধে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের শুরুতে এ দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখে। বিগত কয়েক বছরে এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ও অন্যান্য চিকিৎসাসেবা। ফলে স্বল্প আয়ের রোগীদের নানা ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ৫০০ শয্যার অবকাঠামো থাকলেও অনুমোদন আছে মাত্র ৩০০ শয্যার। শয্যা খালি হলে রোগী ভর্তি করা হয়। শয্যা খালি না থাকলে তারা রোগী ভর্তি করাতে পারছেন না। সরকারি অনুমোদন ছাড়া শয্যা বাড়ানো যায় না। এর জন্য জনপ্রশাসন, অর্থ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ লাগবে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে ‘শয্যা সংকটে ক্যানসার হাসপাতাল’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এর বাস্তবচিত্র তুলে ধরে বলা হয়, রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাহিদার তুলনায় শয্যাসংখ্যা অপ্রতুল। আছে আরো বিভিন্ন সমস্যা। যে কারণে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎকরা রোগীদের সাধারণ চিকিৎসা দিয়েই বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। যাদের জরুরি ভর্তি প্রয়োজন নানা অজুহাতে তাদের ভর্তির সময় পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা রীতিমতো ভয়ানক। এ ছাড়া বেশির ভাগ রোগীর সঙ্গে আসেন তাদের স্বজনরা। রোগীর দেখভালসহ সামগ্রিক পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন তারা। কিন্তু প্রয়োজনীয় শয্যার অভাবে তাদের প্রচ- বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারেিদর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, রহস্যজনক কারণে প্রায় ৩০০ শয্যার জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের আটটি ওয়ার্ড দীর্ঘ নয় বছর ফেলে রাখা হয়েছে। এগুলো চালু করা হলে সামান্য হলেও অবস্থার পরিবর্তন হতো। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিগগিরই নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তারপর হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু হবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি শুভ উদ্যোগ। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কারণ এ মরণব্যাধি নিয়ে হেলাফেলার কোনো সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য খাতে নতুন ঝুঁকি ক্যানসার। প্রাথমিক অবস্থায় তা নির্ণয় করা গেলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তবে এ জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসা। অভিজাত বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ক্যানসার চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় গরিব রোগীরা সেখানে পৌঁছাতে পারেন না। ফলে তাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতেই ছুটতে হয়। কিন্তু সেখানেও যদি তারা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন, তখন সেটাই হবে সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য। আমরা আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যা সমাধানে সরকার তার ভূমিকা রাখবে।
"