বাড়ছে কিশোর অপরাধ
অপরাধ বৃত্তেই যেন পাওয়া যাচ্ছে সোনার হরিণ। আর সেই সোনার হরিণ ধরার প্রতিযোগিতায় ছুটছে মানুষ। বয়সের ভেদাভেদ নেই। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। জন্ম থেকে কবর পর্যন্ত। কে নেই এখানে! আগে কিশোরদের খুব একটা দেখা যেত না। এখন দেখা যাচ্ছে। সবাইকে পেছনে ফেলে খুন-ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা কিশোরদের মাঝে ক্রমশই বাড়ছে। কিশোরদের এই অপরাধ ও নৃশংসতার মাত্রা দেশ ও জাতির মূল্যবোধ এবং মানবতাবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, জাতি হিসেবে আমরা কি একটি ভগ্ন মানব-স্তূপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?
এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়, হয়তবা তাই। কিন্তু কেন এই অধঃপতন। পুলিশের ভাষ্য মতে, ‘রাজনৈতিক দলের কথিত বড় ভাইদের কথায় অসংখ্য কিশোর অপরাধে জড়িয়ে নিজেদের ধ্বংস করছে।’ শুধু কি তাই! এখানে আর কারো সহায়তা নেই? সম্প্রতি চট্টগ্রামের স্কুলছাত্র আদনান ইসপার হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচ কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এক নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। এদের সবাই গরিব পরিবারের সদস্য। টাকার অভাবে এরা তাদের ইচ্ছা পূরণে সক্ষম নয়। নয় বলেই অনৈতিকতার বলয়ে এদের ম্যারাথন যাত্রা। কথাগুলো আমার নয়, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলমের। তিনি সঙ্গ দোষের কথাও বলেছেন। অপর এক নগর গোয়েন্দা পুলিশ সহকারী কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেছেন, কিশোরদের নিয়ন্ত্রণ করতে বাবা-মা ও শিক্ষকরা ব্যর্থ হচ্ছেন। তিনি আরো বলেছেন, মোবাইল ও ইন্টারনেট কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও বলেছেন একই কথা। কিন্তু আসল কথাটি থেকে গেছে সবার পেছনে। অনেকটা আড়ালে। কেউই বলছেন না আমাদের লুটপাটের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি গোটা জাতিকে আজ এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। গোটা জাতি যখন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন শিশু-কিশোরদের ওপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে। এই কিশোররাই যে এখনো সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠেনি এটাই আমাদের সৌভাগ্য। তবে এখনো সময় আছে, আমরা সাবধান হতে পারি। এ কাজে সর্বাগ্রে রাজনীতিকদের এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো একটি যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে পুলিশ বাহিনীকে। অনৈতিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নৈতিকতার দ্বৈরথে চেপে সমাজের জঞ্জাল সরানোর কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে। আমরা মনে করি, এই দুই বিভাগ সততার সঙ্গে এগিয়ে এলে কিশোর অপরাধের মাত্রা শূন্যতে নেমে আসতে বাধ্য এবং এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"