সাবরিনা শুভ্রা

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮

মতামত

অগ্রগতির পূর্বশর্ত নারী উন্নয়ন

জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে নারী উন্নয়ন। বর্তমান সরকার নারীর সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অতীতে আমাদের সমাজে নারীশিক্ষার বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত। কিন্তু নারী উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমাদের দেশে নারীশিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকেই চিহ্নিত করে।

মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ১৬৯ দেশের মধ্যে সবচেয়ে নিচু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান। কিন্তু নারী উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮২তম। নারী উন্নয়নের ধারাটি যদি লক্ষ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের নারীরা অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। উন্নয়নের মূলধারাতেই ঘটেছে এ অগ্রগতি। তবে যতটা প্রত্যাশিত ছিল, ততটা ঘটেনি। কখনো বিভ্রান্তিকর রাষ্ট্রীয় নীতিমালা গ্রহণ, কখনো নীতিমালা প্রণয়ন বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সূত্রতার আশ্রয় নেওয়াÑনানা কারণে নারী উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে, যদিও নারী উন্নয়নে সাড়া জেগেছে, বেড়েছে সচেতনতা, সেই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চলছে নারী উন্নয়ন। নারী উন্নয়নের এ গতি আসে মূলত ১৯৯৫ সালে বেইজিং চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের পর, ওই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮৯টি দেশ নারী উন্নয়নের ১২টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। নারী উন্নয়নের পথে যে ১২টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়, দারিদ্র্যের স্থান তার শীর্ষে।

নারী উন্নয়নের প্রধান বাধাই হচ্ছে দারিদ্র্য। অর্থনীতিবিদদের মতে দারিদ্র্য বহুমাত্রিক। শুধু নারী হওয়ার কারণে দরিদ্রদের মধ্যে নারীর অবস্থান দরিদ্রতর। ব্যাংকগুলো নারীকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অন্যান্য তথ্যভা-ারে নারীর প্রবেশাধিকার একেবারেই সীমিত। বাংলাদেশে এখনো সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। নারী উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি হচ্ছে নারী শিক্ষা ও নারী প্রশিক্ষণ। প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের ভর্তির হার বেড়েছে এমনকি এ হার ছেলেদের তুলনায় বেশি। বৃত্তিমূলক শিক্ষায়ও এগিয়ে আসছে মেয়েরা (২৬ শতাংশ)। পাবলিক পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো করছে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে নারী উন্নয়নের পথে আরেকটি বড় বাধা। সাম্প্রতিককালে ক্ষমতায়নকে তাই নারী উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। নারীকে তাই ক্ষমতায়নের বিভিন্ন স্তরে নারীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করা জরুরি।

নারী-পুরুষ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল। পরিবার ও সমাজে কন্যা-জায়া-জননী হিসেবে নারীর ভূমিকা বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। একই সঙ্গে নারীর মানবিক মর্যাদা ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। আসলে একটি আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা ভূমিকার কথা চিন্তাও করা যায় না। নারী-পুরুষ কেউ কারো প্রতিপক্ষ তো নয়ই, বরং একে অপরের পরিপূরক। সমকালীন বিশ্বে নারী নেতৃত্ব অনেকটাই সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ কথা আরো সত্যি। এ দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রীও নারী। সরকার, প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশায় নারীদের অবস্থান সুদৃঢ়। নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নারীরা অগ্রগণ্য। কিন্তু তার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী এখনো বৈষম্যের শিকার। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলেও দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারীসমাজ এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। যৌতুকসহ নানাবিধ কারণে এখনো অনেক নারীকে নির্যাতিত হতে হয়, কখনো কখনো জীবনও দিতে হয়। কর্মক্ষেত্রেও নারীর বৈষম্য সেভাবে কমেনি। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকারও নারী, এমন অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম গার্মেন্ট সেক্টরে শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী। আর কৃষিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ তো সেই অতীত থেকে। কর্মজীবী নারীকে অনেক ক্ষেত্রে পোহাতে হয় নানা ভার।

এ দেশে এখনো নারীদের সমস্যা বহুবিধ। পরিবার, সমাজ, বাইরের কর্মজগৎ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিকার আদায়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়, ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষার কারণেও নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারীর মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈষম্য আমরা দেখছি। এ ছাড়া যৌতুক, বাল্যবিবাহ, একাধিক কন্যাসন্তানের জন্মদান নিয়ে স্ত্রী তালাক, পারিবারিক সহিংসতা, অ্যাসিড নিক্ষেপ বা হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। আমরা মনে করি, নারীর সত্যিকার উন্নয়ন করতে হলে রাষ্ট্রীয় সবক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে।

লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist