ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮

পর্যালোচনা

শীতে তীব্র গ্যাস সংকট

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় রাজধানীতে আবাসিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত গ্যাসের সংকট নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতকালে এ সংকট চরমে ওঠে। এবারকার শীতে রাজধানীর এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে গ্যাস সংকটে ভুগছেন না ভোক্তারা। রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকটের জন্য রান্নাবান্নার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মগবাজার, মধুবাগ, যাত্রাবাড়ী এবং পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সংকট গ্রাহকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিতাস কর্তৃপক্ষের মতে, শীতকালে বাসাবাড়িতে ২০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কারণ এ সময় গরম পানির জন্য গ্যাসের চুলা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শীতে তাপমাত্রা কম থাকায় গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহও ব্যাহত হয়। গ্যাসের লাইনে এ সময় তেলজাতীয় পদার্থ জমে যাওয়ায় তৈরি হয় গ্যাস সংকট। দেশে এখন গড়ে প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে তিতাসের প্রতিদিনের চাহিদা ১ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সংস্থাটি পাচ্ছে ১ হাজার ৪৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে দৈনিক ঘাটতির পরিমাণ ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট। শীতে গ্যাসের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব মিলিয়ে দৈনিক ঘাটতি দাঁড়ায় ৬৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। রাজধানীতে গ্যাস সংকটের কারণে বিভিন্ন এলাকার গৃহিণীরা পড়েছেন ঘোরতর সমস্যার কবলে। সকাল ও দুপুরে রান্না করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অনেকে গভীর রাতে রান্নাবান্নার কাজ সম্পন্ন করছেন বাধ্য হয়ে। দেশে গ্যাসের চাহিদা স্পটনিক গতিতে বাড়লেও আবিষ্কৃত হচ্ছে না উল্লেখ করার মতো নতুন কোনো গ্যাস ক্ষেত্র। ফলে গ্যাস সরবরাহে সরকারকে জোড়াতালি দিয়ে চলতে হচ্ছে।

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শিল্প উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখা যেমন জরুরি, তেমন সাধারণ মানুষের সমর্থন ধরে রাখতে আবাসিক চাহিদা পূরণের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। এই ত্রিশঙ্কু অবস্থার মোকাবিলায় সরকারকে এখন থেকেই ভাবতে হবে। নতুন গ্যাসকূপ আবিষ্কারের দিকে যেমন নজর দিতে হবে, তেমনি তরল গ্যাস আমদানির বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্বের দাবিদার। দেশের স্থলভাগে বড় ধরনের কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনা কম থাকায় সাগর প্রান্তের গ্যাস অনুসন্ধানে জরুরি ভিত্তিতে নজর দিতে হবে।

আবাসিক, বিদ্যুকেন্দ্র, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সিএনজি স্টেশন মিলিয়ে দৈনিক গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে কম। প্রতিদিন গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই ঘাটতির মধ্যেই আবার একটি সঞ্চালন লাইন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। অবৈধ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহারের কারণেও সংকট প্রকট হয়েছে। ফলে রাজধানীর বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। এর মাশুল দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সকাল থেকেই বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ কম থাকে। অনেককেই এখন নির্ভর করতে হচ্ছে বাইরের খাবারের ওপর। কোথাও রান্নার কাজ সারতে পেরিয়ে যায় মধ্যরাত। কর্মজীবী মানুষকে গ্যাসের অপেক্ষায় রাত জেগে বসে থাকতে হচ্ছে। প্রতি শীতেই রাজধানীবাসীকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সিএনজি স্টেশনগুলোয়ও দেখা দিয়েছে গ্যাস সংকট। দিনের বিভিন্ন সময়ে সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ কমে যায়। গ্যাস না থাকায় রাজধানীর অনেক সিএনজি স্টেশন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়।

রাজধানীতে জনসংখ্যা বাড়ছে। গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এই বাড়তি চাহিদা মোকাবিলার জন্য চাই আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। উৎপাদন ও বিতরণব্যবস্থায়ও স্বচ্ছতা আনতে হবে। গৃহস্থালি বা আবাসিক কাজে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা স্বল্প গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন এবং অতি প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে খাবার তৈরির কাজে এ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এ সরবরাহ কোনোক্রমেই ব্যাহত করা যাবে না। এ ব্যাপারে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সময়ক্ষেপণ না করে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে গ্যাস সরবরাহ।

এমনিতেই নাগরিক জীবনে দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। তার সঙ্গে গ্যাস সংকট যোগ হয়ে এখন তা রীতিমতো অসহনীয় হয়ে উঠেছে। শীতে গ্যাস সংকট প্রতি বছরের ঘটনা হয়ে দাঁড়ালেও সংকট মোকাবিলার জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন ছিল, তা-ও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘœ করতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist