দুর্নীতিতে পাউবো
শুনেছি মাছের মাথা পচলে সবটাই পচে যায়। মানুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সমভাবে প্রযোজ্য। মানুষের মাথা পচলে ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আর আবদ্ধ থাকে না। গোটা সমাজে তা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ। মাত্রার পরিমাণ বেশি হলে তা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পারে বললে কম বলা হবে। বাংলাদেশের যত্রতত্র এর নমুনা খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। ঘাড় কাত করে তাকালেই পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশ পরিচালনার সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, তাদের বেশির ভাগই এ পচনের শিকার। কেউ স্বেচ্ছায়, আবার কেউ কেউ পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতিতে ডুবছে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো ) ড্রেজার বিভাগ’। শুধু কি এখানেই? প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় নয়! এমন কোনো প্রতিষ্ঠান কি খুঁজে পাওয়া যাবে; যাকে আমরা দুর্নীতিমুক্ত বলতে পারি। আসলে আমাদের মাথায় পচন ধরেছে। একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এ রকম একটি ব্যাধিই যথেষ্ট, দুটির প্রয়োজন পড়ে না।
আফ্রিকার সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা’। যার সিংহ দরোজায় লেখা আছে, ‘কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং সেই জাতির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় প্রতারণার সুযোগ দিলেই হবে। কারণ এভাবে পরীক্ষা দিয়ে তৈরি হওয়া ডাক্তারদের হাতে রোগীর মৃত্যু হবে। ইঞ্জিনিয়ারদের বানানো দালানকোঠা, ইমারত ধসে পড়বে এবং অর্থনীতিবিদদের হাতে দেশের আর্থিক খাত দেউলিয়া হবে। এ ছাড়া বিচারকদের হাতে বিচারব্যবস্থার কবর রচনা হবে। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মানে একটি জাতির অবলুপ্তি।
এখানে না বললেই নয় যে, দুর্নীতিতে কেবল পাউবোর ড্রেজার বিভাগই ডুবছে না; ডুবছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও। যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো লক্ষণও চোখে পড়ছে না; যা সত্যিই একটি জাতির জন্য অশনিসংকেত। এ সংকেত মাথায় রেখে আজ আমাদের আরো একবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতো আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি পারবেন সেই মহারণের নেতৃত্ব দিতে? আমাদের বিশ্বাস তিনি পারবেন এবং এটাই সবার প্রত্যাশা।
"