reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ জানুয়ারি, ২০১৮

সাক্ষাৎকারে আতিকুল ইসলাম

মেয়র নির্বাচিত হলে যানজট ও জলাবদ্ধতামুক্ত ঢাকা গড়ব

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনে মেয়র নির্বাচন হলে শহরের যানজট নিরসনকে প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করা। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পর এক মিনিট সময়ও নষ্ট করতে চান না তিনি। নগর উন্নয়নে নগরবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বজন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই কাজ করতে ইচ্ছুক এই মেয়র প্রার্থী। প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : আইনি জটিলতার কারণে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মানুষের মনে একটা সংশয় দেখা দিয়েছে। আর নির্বাচন হলেও তা কতটুকু সুষ্ঠু হবে, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন?

আতিকুল ইসলাম : নির্বাচন হবে কি-না এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ। তাদের নিয়ম অনুযায়ী তারা তফসিল ঘোষণা করেছে। তারা (ইসি) তাদের কাজ করছে। আমি মাঠে আমার কাজ করছি। আর নির্বাচনের জন্য সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। সরকারও চায় নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। আপনি বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো দেখেন। নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে। সুতরাং এ নির্বাচন নিয়েও আমি আশাবাদী।

প্রতিদিনের সংবাদ : নগরীর কোন সমস্যা আপনাকে বেশি ভাবায়?

আতিকুল ইসলাম : অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি এলেই চিন্তায় পড়ে যাই। কারণ বৃষ্টির পরিমাণ যাই হোক না কেন, পানি জমবেই। আমরা জানি, যে শহরের চারপাশে জলাধার রয়েছে, সে শহরের মানুষ জান্নাতে বসবাস করে। কিন্তু ঢাকা শহরের বাসিন্দারা বিপরীত অবস্থানে বসবাস করছে। আমাদের চারপাশে খাল, নদী রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা হচ্ছে না। কারণ খাল ও নদী অবৈধ দখল হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। খাল খনন করা হবে, যাতে নির্বিঘেœ পানি নিষ্কাশন হতে পারে।

প্রতিদিনের সংবাদ : জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি। আপনি কি এ বিষয়ে একমত?

আতিকুল ইসলাম : হ্যাঁ। অবশ্যই একমত। কারণ নগরীতে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হয়, সে পরিমাণ অপসারণ করা হয় না। প্রতিদিনই বর্জ্যরে পরিমাণ বাড়ছে। শুধু ডিএনসিসির ৩৬টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্য অপসারণ করা হয় না। ফলে ময়লা-আবর্জনাগুলো ড্রেনে পড়ে জ্যাম হয়ে থাকে। এতে বৃষ্টি হলে যথাসময়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধা সৃষ্টি হয়। নির্বাচিত হয়ে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুন্দর করব। এ ছাড়া বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে নগরীতে আর বর্জ্য খুঁজেও পাওয়া যাবে না।

প্রতিদিনের সংবাদ : শহরের মোট ভূখ-ের ২৫ শতাংশ সবুজায়নের কথা থাকলেও আছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। সে হিসেবে নগরীকে সবুজ ও পরিবেশবান্ধব করতে কী করবেন?

আতিকুল ইসলাম : দিনকে দিন শহরে বড় বড় অট্টালিকা ভবনের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে জলাশয় এবং সবুজ গাছগাছালির সংখ্যা। নতুন নতুন ভবন তৈরি করতে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। মানুষ জানেই না একটি সবুজ বৃক্ষ মানুষের জন্য কত প্রয়োজন। যে গাছটি প্রতিদিন আমাদের নিশ্বাস নিতে সহায়তা করে। নির্বাচিত হলে একটি কর্মসূচি রাখব বৃক্ষরোপণ অভিযান নামে। এ ছাড়া খালি জায়গা ও বাসার ছাদের ওপরে সবুজায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নগরীকে সবুজায়ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : ডিএনসিসির এলাকায় অঞ্চলভেদে সমস্যা ভিন্ন। কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতা, কোনো এলাকায় মশা, আবার কোনো এলাকায় মাদক সমস্যা রয়েছে। এগুলো নিরসনে কী ধরনের প্রদক্ষেপ নেবেন?

আতিকুল ইসলাম : আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনার সঙ্গে আমি একমত। যেমন গুলশানে জলাবদ্ধতা সমস্যা নেই, কিন্তু মিরপুরে আছে। এসব সমস্যা সমাধানে আমি ইতোমধ্যে ফেসবুক পেজ খুলেছি। এই পেজে নগরীর বাসিন্দারা তাদের সমস্যাগুলো বলবে। ইতোমধ্যে নগরবাসী সমস্যাগুলো এই পেজে দিতে শুরু করেছে। তা ছাড়া আমার এমন পরিকল্পনাও রয়েছে, নির্বাচিত হলে অঞ্চলভেদে প্রধান তিন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথে যাব।

প্রতিদিনের সংবাদ : নগরীতে খেলার মাঠ ও পার্কের খুবই অভাব, যা কয়েকটা আছে, তাও আবার দখল ও দূষণের শিকার। নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্বাস্থ্যভাবে বেড়ে উঠতে হলে এই দুটো জিনিস খুবই দরকার। আপনি কি এ বিষয়ে একমত?

আতিকুল ইসলাম : ঢাকার সব খেলার মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারা খেলার কোনো জায়গা না পেয়ে মোবাইল-ইন্টারনেটের বিভিন্ন গেমসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে তরুণ প্রজন্মের মেধা বিকশিত হতে পারছে না। তাই আমি ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত হলে সব খেলার মাঠ উন্মুক্ত করব। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্মুক্ত ঢাকা গড়ার চেষ্টা করব।

প্রতিদিনের সংবাদ : নগরীর বস্তিতে যারা বসবাস করছে, তারা খুব অবহেলিত। তাদের উন্নয়নে কী ধরনের প্রদক্ষেপ নেবেন?

আতিকুল ইসলাম : আপনি দেখেন, বস্তির নাগরিকরা কিন্তু অভিজাত এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগী। তারা (বস্তির দরিদ্র মানুষ) না থাকলে আমাদের জীবনযাপন কষ্ট হয়ে যাবে। কারণ তারাই আমাদের বুয়া, ড্রাইভার, দারোয়ানসহ নানা কাজে সহযোগিতা করছে। তাদের জন্য আমি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নগর স্থপতি, পরিকল্পানাবিদ ও প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। শুধু এটুকু বলে রাখি, আমরা সবাই যে রকম দক্ষিণের বাতাস খাচ্ছি, আমি তাদেরও (বস্তিবাসী) দক্ষিণের বাতাস খাওয়াব।

প্রতিদিনের সংবাদ : নগরীতে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে অনেক। কিন্তু সেগুলোর মান ভালো না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন নিয়ে কিছু ভেবেছেন?

আতিকুল ইসলাম : নগরীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান এগিয়ে। কিন্তু তাদের ব্যয় বেশি। শহরে ১০০টির মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু পড়াশোনার মান এত ভালো না। নির্বাচিত হলে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান বাড়াতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশসহ অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়নে কী ভাবছেন?

আতিকুল ইসলাম : দেখেন গুলশান-বনানী এলাকা কিন্তু আগে সিটি করপোরেশনের ভেতর ছিল না। কিন্তু এখন এই এলাকাগুলো উন্নত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলো উন্নত হবে। তবে আমি নির্বাচিত হলে নতুন ওয়ার্ডগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেব।

প্রতিদিনের সংবাদ : যানজটে নাকাল মানুষ। বলা চলে অচল। সেই যানজটের ঢাকাকে সচল করতে আপনার প্রদক্ষেপ কী?

আতিকুল ইসলাম : ঢাকা শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা ট্রাফিক জ্যাম। এই সমস্যাটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এটি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। দ্বিতীয় সমস্যা খোঁড়াখুঁড়ি। নগরীতে প্রতিদিনই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এর কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমা বা টাইম লিমিটেশন নেই। এর জন্য নির্দিষ্ট টাইম লিমিটেশন দেওয়া হবে এবং বিদেশের মতো রাতে কাজ করার সিস্টেম বের করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : নগরপিতার কাছে নাগরিকদের অনেক আশা থাকে। নাগরিক ও নগরকে ঘিরে নগরপিতাদেরও অনেক স্বপ্ন থাকে। পরিকল্পনা থাকে। আপনার পরিকল্পনাটা কী?

আতিকুল ইসলাম : সর্বশেষ আমি একটা কথাই বলতে চাই, আনিস ভাই (প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক) যেখানে কাজ শেষ করেছেন, আমি সেখান থেকে শুরু করতে চাই।

প্রতিদিনের সংবাদ : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আতিকুল ইসলাম : আপনাকে ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিদিনের সংবাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক হাসান ইমন

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist