ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ০৫ জানুয়ারি, ২০১৮

বিশ্লেষণ

বিনামূল্যে পাঠ্যবই

১ জানুয়ারিতে বই উৎসবে মেতেছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী। এদিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ বর্তমান সরকারের একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এ বছর প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বইয়ের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে অনুশীলন খাতা। পাঠ্যবই নিয়ে এর আগে প্রতি বছরই যে অশুভ সংকট দানা বেঁধে উঠত, বিনামূল্যে বই বিতরণের মাধ্যমে তার ইতি ঘটানো সম্ভব হয়েছে। পকেটের টাকা খরচ করেও আগে সময়মতো পাঠ্যবই কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত। অসৎ বই ব্যবসায়ীরা মুনাফা অর্জনের জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানির মুখে ঠেলে দিত। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে নোটবই কিনতেও তাদের বাধ্য করা হতো। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সেই অবস্থার অবসান ঘটিয়েছে। প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সরকার শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। পরিণতিতে শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্তিও ঘটছে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের এক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যে জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক তা বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত হয়েছে।

সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সাড়ে চার কোটি ছাত্রছাত্রীকে এ বছর বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ কপি বই বিতরণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনেই যাতে বই হাতে পায় তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি স্কুলে বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ ও নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তা বিশ্বসমাজেও প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় সরকার কতটা সফল তা সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। শিক্ষক নিয়োগে নিয়োগ বাণিজ্যের অবসান এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার পরিবেশ নিষ্কণ্টক করতে সরকারকে যতœবান হতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে নানামুখী কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিয়েও শিক্ষা ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা আশা করব নিজেদের সুনামের স্বার্থেই শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হোক।

বছরের শুরুতে শিশুদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেয় সরকার। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসবের মাধ্যমে শিশুদের হাতে এই বই তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিনামূল্যের এসব বই বিক্রি হচ্ছে কালোবাজরে। অনেক স্কুলে সব বিষয়ের বই পৌঁছাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বাজার থেকে বই কিনে নিচ্ছে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সরকারের একটি গণমুখী প্রগতিশীল পদক্ষেপ, যা প্রান্তিক এবং দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষাবলয়ে অন্তর্ভুক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসৎ কর্মচারীদের জন্য সরকারের এ পদক্ষেপ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক ও কর্মচারীরা যোগসাজশ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিনামূল্যে বিতরণের এই বই বিক্রি করে দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি যেসব কর্মকর্তা স্কুল-শিক্ষকদের কাছে বই সরবরাহ করেন তারা অনুমোদিত সংখ্যার তুলনায় বই কম দেন, শিক্ষকরাও ছাত্র বা ছাত্রীকে সবগুলো বই দেন না। আবার শিক্ষকরা বেশি বই পাওয়ার আশায় গ্রামে স্কুল গমনোপযোগী সবাইকে তালিকাভুক্ত করেন, কিন্তু তাদের সবাইকে স্কুলে আনার জন্য আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হন না। ফলে পরবর্তী সময়ে যারা স্কুলে আসে না তাদের বইগুলো উদ্বৃত্ত থেকে যায়। আর এখানেই হয় দুর্নীতি। এই উদ্বৃত্ত বইগুলো তখন চলে যায় কালোবাজারে। এ ছাড়া শহরের প্রাইভেট স্কুলে ছেলেমেয়েদের বছরের শুরুতে বই জোগাড় করতে বলা হয়। ফলে বাজারে হঠাৎ করে বইয়ের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়। বইয়ের এই সংকট কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য বই ব্যবস্থাপনায় জড়িতরা বিনামূল্যে বিতরণের আগেই কালোবাজারে বই বিক্রি করে দেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো কারণেই হোক, যদি শিক্ষার্থীদের হাতে বই না পেঁৗঁছায়, কালোবাজারি থেকে কিনতে হয় তবে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদ-। সংগত কারণেই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রত্যেকটি স্তরেই যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখা জরুরি, যদি কোনো কারণে সুশিক্ষা অর্জনের পরিবেশ বিঘিœত হয় তবে এই ক্ষতি সবারই। আর যদি শিক্ষার প্রাথমিক স্তরেই এমন কোনো অনিয়ম দৃশ্যমান হয় তাহলে এর ফলে ক্ষতির শিকার হবে শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই, যথাসময়ে বই না পৌঁছানো এবং বাজারে বিক্রির বিষয়ে কারণ অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যেন এর পুনরাবৃত্তি রোধ হয়।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

পযধরৎসধহ@রভধফমৎড়ঁঢ়.পড়স

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist