ডিআইইউতে ‘এমপ্লয়্যাবিলিটি অ্যান্ড সফট স্কিল্স’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সামিট অনুষ্ঠিত
‘গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে এমপ্লয়্যাবিলিটি এবং সফট স্কিল্স উন্নয়ন’- এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) স্থায়ী ক্যাম্পাসে ‘এমপ্লয়্যাবিলিটি অ্যান্ড সফট স্কিল্স’ শীর্ষক তিন দিনের আন্তর্জাতিক সামিট হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় থেকে যেসব স্নাতক উত্তীর্ণ হচ্ছে, তাদের প্রায়োগিক জ্ঞান থাকলেও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার অভাবে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে তারা নিজেদের দক্ষতা বা সামর্থ্য প্রদর্শন করতে পারছে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি সেইন্স ইসলাম মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডার্স, বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়ন সোসাইটি জবস.বিডি ও বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, গবেষক, নিয়োগকর্তা ও গ্র্যাজুয়েটদের জন্য একটি যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি এবং বিশ্ব মানের দক্ষতা সৃষ্টির একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে এই সামিটের আয়োজন করা হয়।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে ওই সামিটের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার টিকিউএম কন্সালট্যান্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান পরামর্শক ড. রণজিৎ সিং মালহি। বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইউসুফ এম ইসলাম, উপ-উপাচার্য ড. এসএম মাহবুব-উল-হক মজুমদার, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের পরিচালক এবং সামিটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফরিদ এ সোবহানী।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গবেষণার উদ্ভাবনীগুলো এবং বিশ^ব্যাপী কর্মযোগ্যতার কোমল দক্ষতাগুলোর সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও নবপ্রবর্তিত শিক্ষা বিষয়ক পণ্য ও কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি অংশীদারিত্ব ও বিনিময়ের লক্ষ্যে এবং প্রশিক্ষকদের উদ্ভাবনী শিক্ষা উপকরণসমূহ ও প্রকল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণের একটি দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যেই এই সামিটের আয়োজন করা হয়।
ছাত্রজীবনেই নিজেদেরকে কর্মদক্ষরূপে গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি- সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় উন্নয়ন হচ্ছে। তোমরা সৌভাগ্যবান যে, এই উন্নয়ন তোমাদের হাত ধরেই হচ্ছে। আমরা চাই না, উন্নয়নের মাঝে কোনো স্পিডব্রেকার বসুক। তাই এই উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে নতুন প্রজন্মকে কর্মদক্ষরূপে গড়ে উঠতে হবে। চাকরিপ্রার্থীদেরকে আন্তর্জাতিক চাকরিবাজারের উপযোগী করে গড়ে উঠতে হবে।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা এখন সবাই এক পৃথিবীর বাসিন্দা।’
মো. সবুর খান বলেন, ডিগ্রি শুধু চাকরিতে ইন্টারভিউ প্রদানের সুযোগ দেয়; ডিগ্রি কখনো চাকরি দেয় না। চাকরি পেতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই দক্ষ ও যোগ্য হতে হয়। এজন্য চাকরিতে প্রবেশের আগে একজন চাকরিপ্রার্থীকে অবশ্যই তিনটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হয়- এক. চিন্তার দক্ষতা, দুই. যোগাযোগে দক্ষতা, তিন. দায়িত্ববোধের দক্ষতা।
তিনি আরো বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, তারা চাকরি পান না। অপরদিকে চাকরিদাতাদের অভিযোগ, তারা যোগ্য প্রার্থী পান না। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, চাকরিপ্রার্থী এবং চাকরিদাতাদের মধ্যে স্পষ্ট একটি শূন্যস্থান রয়েছে। এই শূন্যস্থান খুঁজে বের করার জন্যই তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন। আমরা আশা করছি, এই সম্মেলন থেকে আমরা একটা পথ খুঁজে পাবো।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সত্যিকার অর্থেই কর্মদক্ষ জনবল তৈরি করতে চায়। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’ (৩৬০ ডিগ্রি) কোর্স চালু করা হয়েছে।
তিন দিনব্যাপী এই সামিটে দেশ-বিদেশের নামিদামি শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা তিনটি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ২৭টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমপ্লয়্যাবিলিটি’, ‘বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে এমপ্লয়্যাবিলিটি’ ও ‘এমপ্লয়্যাবিলিটির বিবেচ্য বিষয়সমূহের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়’। সামিটে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা প্রকল্প উপস্থাপনের পাশাপাশি বেশ কিছু সংখ্যক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, শ্রীলংকা, তুরস্ক, নেপাল, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জিবুতি এবং স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করে। বিজ্ঞ জুরি বোর্ডের বিচারে সেরা প্রবন্ধকে সর্বোচ্চ এক হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার প্রদান করা হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
"