রাকিব হোসেন

  ১০ আগস্ট, ২০২০

নিজ নিজ বিদ্যাপীঠে ফেরার অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা

অদৃশ্য এক করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্থবির গোটা বিশ্ব। প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা। আজ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যা আহরণের চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা ছিল, সেই মুহূর্তে আজ লকডাউন নামক চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ। ঘরবন্দির একঘেয়েমি আর ভালো লাগছে না শিক্ষার্থীদের। তারা সুস্থ পৃিথবীতে আবার সেই চিরচেনা নিজ নিজ বিদ্যাপীঠে ফিরতে চায়। ভালবাসায় রাঙানো কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে আড্ডা দিতে চায়। আবারও মধ্য রাতে গিটার নিয়ে গানের ভুবনে মত্ত থাকতে চায়। কবে ফিরবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছে শিক্ষার্থীরা। এমনই নিজ ক্যাম্পাসে ফিরতে অপেক্ষার কথা বলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্নবাজ শিক্ষার্থীরা। ভালোবাসার ক্যাম্পাসে ফেরার আকুতি জানিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, ‘আজ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যার সিন্ধু ছেঁচে মুক্ত আহরণের প্রান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা ছিল সেই মুহূর্তে আজ আমরা ঘরবন্দি। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সবটুকুই আজ প্রতিক্ষায়। মিনতি জানাই, হে প্রকৃতি রানী সুস্থ হও, মধ্যবিত্তদের স্বপ্নপূরণের এখনো যে রয়ে গেছে বাকি! হে প্রিয় ক্যাম্পাসের ১৭৫ একর তোমার বুকে টেনে আমায় আবারও আলিঙ্গন করো। তোমার সবুজ খাতার পাতায় আবারও আঁচড় কেটে আঁকিবুঁকির সুযোগ করে দাও।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাহিনুর রহমান বলেন,‘ করোনার এই ভয়াল থাবা না থাকলে আজ হয়তো টিএসসি হয়ে উঠতো হাজারো স্বপ্নবাজদের মিলনস্থল। কার্জনের সবুজ ঘাস, শহীদুল্লাহর পুকুরপাড়, কলাভবনের সামনের বটতলা আর এফবিএস এর সামনের সবুজ চত্বর হয়ে উঠতো জ্ঞান অন্বেষণকারীদের ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া হাজারো আড্ডার সাক্ষী। প্রতিটি সকাল শুরু হতো লাইব্রেরির সামনে রাখা সারি সারি ব্যাগের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবতা আজ প্রতীক্ষায় রূপ নিয়েছে। অব্যক্ত মনের প্রার্থনা একটাইÑ সুস্থ হোক বসুমতী, সুস্থ হোক বঙ্গ জননী। হাজারো তরুণ-তরুণীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠুক ৬০০ একরের প্রিয় ক্যাম্পাস, টগবগিয়ে চলুক স্বপ্নের লালবাস।’

ক্লাসে ফেরার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম শান্ত বলেন, ‘চিরচেনা সেই বিদ্যাপীঠ আর ভালবাসার মানুষগুলোকে দেখিনা অনেক দিন। কিন্তু আজ ঘরে বসে সোনালি অতীতগুলো মনে করা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমাদের। প্রতিক্ষণেই হৃদয়ে একটা ভয় জাগ্রত করে, প্রিয়জনদের সাথে আবার দেখা হবে কিনা! ক্যাম্পাসে ফিরে ক্লাসে আবার সবাইকে পাবো কিনা! সেই রঙিন ও উৎসবমুখর দিন ফিরে পাবো কিনা। ঘরবন্দি আর কতদিন থাকা যায়। এখন সুদিনের অপক্ষোর প্রহর গুনছি। প্রার্থনা করি পৃথীবি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। সবাই সুস্থ থাকুক।’

ঘরবন্দি জীবন ছেড়ে ক্লাস রুমে ফিরতে চাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওলিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বন্ধু-বান্ধবিদের সাথে আডডা,গান এবং খেলা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে চাই। আবারও ক্লাস-পরীক্ষা পড়াশোনা নিয়ে সময় পার করতে চাই।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘একটি অপরিচিত ক্যাম্পাস যেন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষার বিশাল পাহাড় যেন কোনভাবেই শেষ হচ্ছে না। প্রতিটা মৃহূর্তে যেনো বিশাল স্মৃতির মরূভুমি হয়ে যাচ্ছে। আর মুহূর্তে মুহূর্তে হৃদয়ে নাড়া দেয় প্রাণের ক্যাম্পাসে ফেরার আকুলতা।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close