ক্যাম্পাস ডেস্ক

  ৩১ জুলাই, ২০২০

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় কী প্রয়োজন

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা আজকাল অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ও বাস্তব জ্ঞান না থাকার কারণে এই স্বপ্ন মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার সঠিক ধারণা থাকতে হবে। এ বিষয়ে একজন দক্ষ কনসালট্যান্ট বা আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েও ভর্তির পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন কর যেতে পারে। বাংলাদেশে যে কয়েকজন আইনজীবী সুনামের সঙ্গে অভিবাসন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

দেশ নির্বাচন : বাংলাদেশ থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে যেতে যান। কেউ স্নাতক পড়ার সময়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করেন। কেউ স্নাতকোত্তর অথব কেউ পিএইচডি করতে যান। অনেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যান। নিজেকে স্ট্যান্ডার্ড মানে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। তবে শুধু বিদেশ হলেই হলো না, শিক্ষার মানের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। এশীয় দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া ও চীন এবং ইউরোপের মধ্যে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, কোরিয়া, রাশিয়া, আমেরিকা ইত্যাদি দেশগুলোতে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অনেকে ইতালি, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং পাশের দেশ ভারতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান।

বিষয় নির্বাচন : কোন লেভেলে পড়তে যাবেন, এট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোন বিষয়ে পড়তে যাবেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ডিপ্লোমা, গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি যেকোনে লেভেলে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী পড়তে যেতে পারেন। প্রচলিত বিষয়গুলোর বাইরে একবারে নতুন একটি বিষয়ও নির্বাচন করতে পারেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চাহিদা রয়েছে এমন চাহিদাসম্পন্ন বিষয় নির্বাচন কর যেতে পারে। মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা প্রশাসন, কমার্স, আর্টস, সায়েন্স, মেরিন ইত্যাদি বিষয়গুলোও হতে পারে আপনার উচ্চশিক্ষার বিষয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন : দেশ ও বিষয় নির্বাচন হয়ে গেলে আপনাকে সঠিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ভৌগোলিক অবস্থান, টিউশন ফি, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আবাসিক সুবিধা, বৃত্তির ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ের অবস্থান, পড়াশোনার পদ্ধতি, ভর্তির প্রাথমিক যোগ্যতা, খরচাদি ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে।

ভর্তির শর্ত পূরণ : প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভর্তির শর্তসমূহ থাকে। বিষয়ভেদে এবং কোন লেভেলে পড়াশোনা করতে যাবেন, তার ওপর নির্ভর করে শর্তসমূহ। একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই প্রতিটি শর্ত সুচারুভাবে পূরণ করতে হবে। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হলো ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা। যদিও ইউরোপের অনেক দেশে বিষয়টির ক্ষেত্র শিথিল রয়েছে। তবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে আইইএলটিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ভাষাজ্ঞান প্রমাণ করতে হয়।

ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু ও শেষ হওয়ার তারিখ : যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদন করবেন, সেখানে কোন তারিখে ভর্তি শুরু এবং কবে শেষ, সে সম্পর্কে আবেদনকারীর পরিষ্কার জ্ঞান থাকতে হবে। এই বিষয়ে একজন দক্ষ কনসালট্যান্ট বা আইনজীবীর সহায়ত নেওয় যেতে পারে।

খরচ ও স্কলারশিপ : উন্নত জীবনমান ও মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেলেই হয়তো লুফে নিতে চাইবেন। কিন্তু তার আগে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে খরচের ব্যাপারটি। এ ক্ষেত্রে যারা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবেন, তাদের বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে স্কলারশিপের মেয়াদ কত। সেটি নবায়ন করা যাবে কি-না। স্কলারশিপ যদি নবায়ন করাও যায়, তবে তা কী ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে, তা জানতে হবে। স্কলারশিপের অর্থে কী কী খরচ করা যাবে, ত জেনে রাখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সেখানকার জীবনযাত্র কেমন ব্যয়বহুল এবং আপনার পক্ষে স্কলারশিপের অর্থে সবকিছু নির্বাহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি-না, তা ভাবতে হবে ভালো করে। তবে অনেকেই আবার নিজের পয়সা খরচ করে পড়তে চান। তাদের ক্ষেত্রে পছন্দের কোর্সটি সম্পন্ন করতে মোট কত খরচ হতে পারে এবং কীভাবে পরিশোধ করতে হবে, সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে।

এ ক্ষেত্রে সহজ একটি উপায় হতে পারে উল্লিখিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-মেইল করা। তারা ফিরতি মেইলে মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি জানিয়ে দেবে। হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে টিউশন ফি, আবাসন খরচ, খাবার খরচ, বইপত্র বাবদ খরচ, ইনস্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি। খরচ কমানোর বিকল্প ব্যবস্থা অথব সেমিস্টারের টিউশন ফিতে কিছুটা কমিশন পাওয়া যায় কি-না, সেটার খোঁজ নেওয় যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে না থেকে অনেকে আলাদা পরিবারের সঙ্গে থাকেন। এতে নির্ধারিত খরচের অনেকটায় কমে আসে। দেশটির জীবনযাত্রা কেমন ব্যয়বহুল এবং আপনার পক্ষে তা নির্বাহ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি-না, জেনে নিতে হবে।

আর্থিক সামর্থ্য : বিদেশ স্টুডেন্ট ভিসায় আসতে হলে অবশ্যই ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাক দেখাতে হয়। ভিসা আবেদন করতে গেলে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এ দেশে এসে পড়াশোনার যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের আর্থিক সামর্থ্য আবেদনকারীর রয়েছে। এ জন্য আবেদনকারীর অভিভাবক বা আত্মীয়ের ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে, সে প্রমাণ দেখাতে হবে। একে সাধারণত ‘স্পন্সর বা গ্যারান্টর’ বলে। তবে অভিভাবকের সেই সামর্থ্য না থাকলে এমন একজন স্পন্সরের প্রয়োজন হবে যিনি তার ব্যাংকে আবেদনকারীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখবেন, যা নিশ্চিত করবে যে আবেদনকারীর পড়াশোনার খরচ তিনি চালাবেন। তবে বাংলাদেশ থেকে ভিসা আবেদন করলে মা-বাবার আর্থিক সামর্থ্যতাকেই, অর্থাৎ মা-বাবাকেই স্পন্সর বা গ্যারান্টর হিসেবে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close