রাবিতে শেষ হলো আনর্ত নাট্যমেলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শেষ হলো দুই দিনব্যাপী আনর্ত নাট্যমেলা। জাতি হিসেবে অসম্প্রদায়িক ও বাংলা নাটককে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের আয়োজন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছেন দুই বাংলার নাট্যবোদ্ধা ও আয়োজকরা।
৬ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে (বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের সামনে) কিচ্ছানাট্য ‘বেলাবতী কইন্যা’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী এ মেলার পর্দা নামে। কিচ্ছানাট্য পরিবেশন করে নওগাঁর কিচ্ছানাট্য শিল্পী সাইদুল ইসলামের দল। এর আগে বিকেল ৩টায় ‘থিয়েটার করিয়া কী হইবে, যদি কিছু হয় তবে চাই স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়’ শীর্ষক এক আনর্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বক্তারা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনে থিয়েটারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন ‘দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশলতা রক্ষা ও অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়াক্ষেত্রে থিয়েটারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। থিয়েটারে জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রনালয়ের বিষয় তর্কবির্তক হয়। পরে সবাই সম্মিলিতভাবে থিয়েটারের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রনালয়ের দাবি করে বলেন ক্রমে এ দাবি জোরালো হবে।
গত ৫ মার্চ সোমবার দুপুর ১২টায় ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে আনর্ত মঞ্চে মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘আমরা সংস্কৃতিকে এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে চাই যেখানে সংস্কৃতি দেশকে শাসন করবে। আমরা এমন সাংস্কৃতিক জাগরণের জন্য আন্দোলন করছি। কেননা, কেবল শিল্পই পারে হিংসা থেকে উত্তরণ ঘটাতে।’
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, নাটকের মাধ্যমে লোকশিক্ষা হয়। কিন্তু এটা শাসকগোষ্ঠীকে বুঝানো যায় না। ফলে নাটক রাষ্ট্রীয়ভাবেসহ নানাভাবে নিগৃহীত হয়। আমরা চাই রাষ্ট্র আরো মানবিক হোক। প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ হয়েছিল বলে আজ আমরা এ অবস্থানে আসতে পেরেছি। অন্যথায় আমরা এমন পরিবেশ পেতাম না।
নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি রহমান রাজুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, বিপ্লব বালা, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবলীনা ত্রিপাঠী ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে শিল্পযাত্রা শিরোনামে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মেলাপ্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে ‘থিয়েটারের নেপথ্য ও প্রত্যক্ষ মানুষ : উপেক্ষায় সম্ভাবনার সূত্র’ শীর্ষক আনর্তবৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে তিনটি নাট্যকথা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকাল নাট্যচক্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর কালচার অ্যান্ড এডুকেশন (এস), আবৃত্তি সংগঠন স্বনন, অনুশীলন নাট্যদল, মূকাভিনয়, তীর্থক নাটক, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার রাজশাহী, উদীচী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন (রুডা) সংগঠনের স্টল ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সংগঠনগুলোর মধ্যে রাজশাহী থিয়েটার, রাজশাহীর হেরিটেজ আর্কাইভস, বগুড়া থিয়েটার, নাটোরের ভোর হলো ও ইঙ্গিত থিয়েটার, সান্তাহারের চৌপাশ থিয়েটার ও পাবনার ড্রামা সার্কেল। এ ছাড়া তথ্য সরবরাহের জন্য মেলায় রয়েছে ‘সূত্রসন্ধান ও টিকেট’ স্টল। রয়েছে ‘বইয়ের হাট’। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
"