ক্যাম্পাস ডেস্ক

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৯

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়

শতভাগ কর্মমুখী বিশ্ববিদ্যালয়

আকাশ থেকে পাখির চোখে দেখলে পুরো তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের মধ্যে যে ছোট্ট সবুজ সমারোহের দেখা মিলবে সেটিই মূলত বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ টেক্সটাইল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। ১২ একর জমির ওপর নির্মিত ইংরেজি ঊ- শেপের চার তলা ভবনটি থেকেই বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক খাতের দক্ষ ব্যবস্থাপক ও প্রকৌশলী সরবরাহ হয়ে থাকে। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শ্রেণিকক্ষ, আধুনিক টেক্সটাইল প্রকৌশলী শিক্ষা বই-সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, গ্রুপ স্টাডির জন্য টিএসসি, শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার বিশাল মাঠ, শরীরচর্চা কেন্দ্র, মসজিদ এবং ক্যাফেটেরিয়া। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য রয়েছে আধুনিক মেশিনারিজ-সমৃদ্ধ ল্যাবসমূহ। রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব এবং ভার্চুয়াল ক্লাসরুম।

২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজির ৪১০ জন শিক্ষার্থী এবং ২৭ জন শিক্ষক নিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে প্রতি সেমিস্টারে ৬০০ জন শিক্ষার্থী হিসেবে ৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় ১৫০ শিক্ষক নিয়ে চলছে বুটেক্সের শিক্ষা কার্যক্রম।

প্রতি বছর একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে সবথেকে দক্ষ প্রকৌশলী সরবরাহ করে আসছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু থেকে না হলেও ২০১৫ সাল থেকে সেশনজন প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসায় প্রতি বছর বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে সফলতার নজির স্থাপন করে চলেছেন। টেক্সটাইল শিল্পের পাশাপাশি বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারেও এখানকার শিক্ষার্থীরা তাদের সফলতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। উচ্চশিক্ষা এবং টেক্সটাইল খাতের বিভিন্ন সুক্ষ গবেষণায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মান, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে প্রায় ২০ জন শিক্ষক উচ্চতর গবেষণায় মনোনিবেশ করে আছেন।

ফ্যাকাল্টি ও বিভাগ : ফ্যাকাল্টি অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাকাল্টি অব টেক্সটাইল কেমিক্যালস ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাকাল্টি অব ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাকাল্টি অব টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ এবং ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংÑ এ ৫টি ফ্যাকাল্টির অধীনে ১০টি ডিগ্রি অ্যাওর্ডিং এবং চারটি নন ডিগ্রি অ্যাওর্ডিং বিভাগে বিএসসি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ; টেক্সটাইল কেমিক্যালস ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং; ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগ : টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ; সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এবং গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগে মোট ৬০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন প্রতি বছর।

অ্যাক্রিডাইটেড ল্যাব : স্বাধীন বাংলাদেশে কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজির সময় থেকেই টেক্সটাইল শিল্পের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। আগে টেস্টিং ল্যাব এবং ফ্যাশন ডিজাইন ল্যাব আলাদা আলাদাভাবে এ পরীক্ষাগুলো করে এলেও তাতে খুব বেশি সফলতার মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় একটি আন্তর্জাতিক মানের অ্যাক্রিডাইটেড ল্যাব প্রতিষ্ঠার। যেই কথা সেই কাজ। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের মেশিনারিজ স্থাপনের মাধ্যমে অ্যাক্রিডাইটেড ল্যাব এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। আগে যেসব গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট করার জন্য তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের বিদেশে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করা লাগত এখন সেখানে স্বল্প সময়ে দেশেই সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে শিপমেন্ট সচল রাখতে পারছেন তারা। অ্যাক্রিডাইটেড ল্যাবের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে সাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকার কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারছে। এই ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারি নীতি অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্লাব ও ফোরাম : নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সৃশনশীল প্রতিভার বিকাশ ও বাজার উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৭টি ক্লাব ও ১০টিরও অধিক ফোরাম। ক্লাব ও ফোরামগুলো সারা বছর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনার এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চলতি বছরও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বুটেক্স ডিসি বুনন। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সবসময়ে পাশে রয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন ‘বাঁধন’। একাত্তরের চেতনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ‘ক্লাব ৭১’। এ ছাড়া চাকরির বাজারের নানা খোঁজখবর নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার কাজে শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে বুটেক্স বিজনেস ক্লাব। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেটিভ রিসার্স আইডিয়া প্রতিযোগিতায় এ বছর চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শেষ হলো পাঁচ দিনব্যাপী জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা উৎসব।

ভর্তি পদ্ধতি : ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ৫৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলেও এ বছর সুযোগ পাচ্ছেন ৬০০ জন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় আলাদা আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৪.৫০সহ গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান ও ইংরেজিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ পেলেই বুটেক্সে বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। এ বছর প্রতি আসনের বিপরীতে প্রায় ১৩ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি কোটা পদ্ধতি চলতি বছরও কার্যকর রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরকারি শিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি বিএসসি ও এমএসসিতে কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে চালু রয়েছে বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ডের শিক্ষাবৃত্তি। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য এখানে চালু রয়েছে ইউজিসি ও বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি প্রকল্প। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের জন্য এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৃত্তি প্রকল্পও চালু রয়েছে। বিশ্বের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য এ মুহূর্তে ২০ জন শিক্ষক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, তুরস্কসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।

গবেষণা ও সাফল্য : নিয়মিত পাঠদান ও পাঠ গ্রহণের পাশাপাশি বুটেক্সের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা টেক্সটাইল খাতের উন্নতিকল্পে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে নিয়োজিত রয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close