ক্যাম্পাস ডেস্ক

  ০৩ জানুয়ারি, ২০১৯

বৃত্তি নিয়ে পর্তুগালে পড়তে যাওয়া

দেশের বাইরে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা নেয়ার স্বপ্ন আমাদের অনেকেরই থাকে কিন্তু সঠিক তথ্য ও পরিকল্পনার অভাবে তা হয়ে উঠে না। দুনিয়াজুড়ে অসংখ্য বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সম্মানজনক বৃত্তি হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ। দৈনিক শিক্ষার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ মূলত মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এর জন্য অর্থায়ন করা হয়। বিশেষ করে মাস্টার্স এবং ডক্টরেট পর্যায়ে ইরাসমাস মুন্ডাস যৌথ প্রোগ্রামগুলোতে অংশ নেয়ার জন্য এ স্কলারশিপ দেয়া হয়। ইউরোপে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রথম পছন্দ ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রদত্ত এই স্কলারশিপটি। ১৯৮৭ সালে শুরু হয়ে এটি বিগত ৩০ বছরে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সম্মানজনক বৃত্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

উচ্চতর গবেষণা, নতুন নতুন দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার পাশাপাশি এই স্কলারশিপের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে- মাসিক অর্থায়নে শিক্ষার্থীর ভ্রমণ, স্বাস্থ্যবীমা ও গবেষণা সম্পর্কিত সব খরচ বহন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের টিউশন ফি, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, গবেষণা সংক্রান্ত ফিসহ বিভিন্ন ধরনের কনফারেন্স/সেমিনার/ সামার স্কুল/উইন্টার স্কুল প্রভৃতি সব কিছুরই সুবিধা পাওয়া যায় বিনামূল্যে।

এক সময় শুধু মাস্টার্স করার সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ব্যাচেলর ও পিএইচডি’র জন্যও রয়েছে দারুণ সব সুযোগ। মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে একাধিক দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি থাকায় এই স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থী কোর্স চলাকালে ন্যূনতম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

তিনশ’র বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ও ১৫০০ জনের মতো পিএইচডি শিক্ষার্থী প্রতি বছর ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। উন্নয়নশীল দেশ তথা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। ৬ মাস, ১০ মাস, এক বছর/দুই বছরের কোর্স কিংবা পিএইচডি ডিগ্রিতে বৃত্তি নিয়ে প্রতি বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আসছেন বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

২০১৭-২০১৮ সেশনে ইরাসমাস প্লাস প্রকল্পের অধীনে, একশন-১-এ ৬১টি স্কলারশিপ পেয়ে বাংলাদেশ গোটা পৃথিবীতে স্কলারশিপপ্রাপ্তির দিক থেকে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে; একশন-২ ও একশন-৩ মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট স্কলারশিপ প্রাপ্তির সংখ্যা ৮৯টির মতো।

নন-ইউরোপীয় শিক্ষার্থী হিসেবে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ আবেদনের প্রাথমিক তিনটি শর্ত হলো-

১. আপনি ইইউভুক্ত ২৭ সদস্য দেশ এবং যুক্তরাজ্য, আইসল্যান্ড, নরওয়ে বা লিচেনস্টাইনের বাসিন্দা নন।

২. ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য রাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য, আইসল্যান্ড, নরওয়ে বা লিচেনস্টাইনের মধ্যে আপনি গত পাঁচ বছরে মোট ১২ মাসেরও বেশি সময় ধরে আপনার প্রধান কার্যকলাপ (গবেষণা, কাজ, ব্যক্তিগত দর্শন, পর্যটন ইত্যাদি) সম্পন্ন করেননি।

৩. আপনি ৩ বারের বেশি ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স বা পিএইচডিতে আবেদন করেননি।

এ বিষয়ে আরো পরিষ্কার ধারণা পেতে কথা হয়েছে পর্তুগালে পিএইচডি অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মো. নূর আলম মিস্ত্রির সঙ্গে। তিনি সফলভাবে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের অধীনে ২০১৪-২০১৬ সেশনে MSc in Marine Environment and Resource-এর ওপর মাস্টার্স করেছেন।

প্রোগ্রামটির অধীনে তিনি ৫টি ভিন্ন দেশে বিভিন্ন সেমিস্টার সম্পন্ন করেন।University of Bordeaxu, France. University of Basque Country in Spain. University of Southampton, UK. University of Liege, Belgium. Ges w_wmm K‡ib University of Dalhousie, Canada.এর Department of Oceanography.যু. থেকে বর্তমানে PhD করছেন Urban planning এ University of Lusofona.. পাশাপাশি সময় দিচ্ছেন খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে Department of Architecture and Urbanism এ। কথা প্রসঙ্গে তিনি আবেদন প্রক্রিয়া তুলে ধরে বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়াগুলো জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, যথাযথ আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যে কেউ নিশ্চিত করতে পারেন স্বপ্নের এই বৃত্তি। প্রতিটি লেভেল বা পর্যায়ে বিষয় ভেদে আলাদা আলাদা আবেদনের শর্ত বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের দরকার পড়ে। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর উচিত, যে বিষয়ে পড়তে ইচ্ছুক ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের নির্দিষ্ট শর্ত ও চাহিদাগুলো ভালো করে জেনে নেয়া।

মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ ডিগ্রি সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট, জীবনবৃত্তান্ত, ইংরেজি ভাষাশিক্ষার স্কোর, শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত পড়ালেখা সম্পর্কিত মোটিভেশন লেটার ও শিক্ষার্থী সম্পর্কে যথাযথ ধারণা রাখেন এমন দু’জন যোগ্য ব্যক্তির সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার) দিয়ে আবেদন করতে হবে। দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্র (যদি থাকে), যেই প্রোগ্রামে পড়ালেখা করতে আগ্রহী সেই প্রোগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা কিংবা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাগজপত্র আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।

পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিজস্ব প্রস্তাবিত গবেষণাপত্র জমা দিতে হয়। মনে রাখতে হবে, একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিনটি প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। নির্দিষ্ট শিক্ষা বর্ষের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আবেদন প্রক্রিয়া চালু থাকে।

গতানুগতিকভাবে আবেদন না করে নিজের পড়ালেখা, গবেষণা অভিজ্ঞতা ও গবেষণা আগ্রহের সঙ্গে মিল রেখে বিষয়গুলো খুঁজে, আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আবেদন করা উচিত। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার স্কোর (আয়েল্টস/টোফেল/জিআরই) গুরুত্বপূর্ণ তাই আবেদনের আগে অবশ্যই ভালো একটি স্কোর তুলতে হবে।

কিছু কিছু প্রোগ্রামে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার স্কোর জমা না দিয়েও আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যদি তার স্নাতক পড়ালেখা সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে করে থাকেন, অর্থাৎ মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন যদি ইংরেজি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি সনদ সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। আবেদন করার আগে নিজের পছন্দসই প্রোগ্রামের ওয়েবসাইট থেকে কিংবা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরকে মেইল করে নিশ্চিত হওয়া যাবে এই প্রোগ্রামে মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন সনদ দিয়ে আবেদন করা যাবে কিনা।

মোটিভেশন লেটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে। তাই লেখার সময় যতœবান হোন এবং সময় দিয়ে পরিকল্পিতভাবে লিখুন। একজন শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা, কেন তিনি এই প্রোগ্রামে আবেদন করেছেন সংক্ষিপ্ত কথায় তার আবেদনের তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এই প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ কিংবা সমাজে কীভাবে উপকৃত হবে, নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রভৃতি নিখুঁতভাবে সুন্দর উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে ১-২ পাতায় লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে কিংবা ইতিপূর্বে উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে আছেন এমন কারো সহযোগিতা নিতে পারেন।

ইরাসমাস স্কলারশিপের আবেদনের ক্ষেত্রে জীবনবৃত্তান্ত (Curriculum Vitae) জমা দিতে হয়। ইউরোপের জীবনবৃত্তান্ত তৈরিতেhttp:/europass.cedefop.europa.eu/ --এই লিংক থেকে Europass ফরম্যাটে সিভি তৈরি করতে পারবেন। রিকমেন্ডেশন লেটার জমাদানের বাধ্যবাধকতা থাকে। শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে চেনেন-জানেন এমন ২ ব্যক্তি থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, স্নাতক/স্নাতকোত্তর গবেষণা কাজের সুপারভাইজার, কিংবা আপনার কর্মক্ষেত্র যদি আবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় তবে সেই প্রতিষ্ঠান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে থেকেই রিকমেন্ডেশন লেটার নেয়া ভালো। এই লিংকে আবেদন করতে পারলে ইরাসমাস স্কলারশিপ পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। এবং যে কেউ বাস্তবায়ন করতে পারে স্কলারশিপ নিয়ে ইউরোপে উচ্চশিক্ষার কাক্সিক্ষত স্বপ্ন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close