reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ জানুয়ারি, ২০১৯

টেক্সটাইল ল্যাব ক্লাসের নতুন ধারণা

অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক

যেকোনো ধরনের প্রকৌশল শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ল্যাব ক্লাসে কার্যকর অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। টেক্সটাইল প্রকৌশলও তার ব্যতিক্রম নয়। শুধুমাত্র ল্যাব ক্লাসের মাধ্যমেই প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবিষয়ের টপিক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা লাভ করতে পারে। পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়া, কাঁচপাত্র, রঙ ও বস্ত্র উৎপাদনের রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ল্যাব ক্লাসের অন্তর্ভূক্ত বিষয়, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এইসব বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। এরফলে শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কাটিং, বয়ন, সেলাই, বস্ত্র পরীক্ষাকরণ ইত্যাদির জন্য যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই একাধিক যন্ত্রপাতি কেনার সামর্থ রাখেনা। এজন্য দেখা যায়, সব শিক্ষার্থীর পক্ষে একটি ল্যাব ক্লাসে কোনো একটি বিষয়ে হাতেকলমে শেখাটা সম্ভব হয়ে উঠছে না। একটি ক্লাসের গুটিকয়েক শিক্ষার্থী যন্ত্র ব্যবহার করে হাতে-কলমে শিখতে পারছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ল্যাব ক্লাস অকার্যকর থেকে যাচ্ছে। তারা কিছুই শিখতে পারছে না। ফলাফল, একটি বড় অংশের শিক্ষার্থী ল্যাব ক্লাসের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সমস্যাকে বিবেচনায় রেখে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বালাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে একটি নতুন ধারার ল্যাব ক্লাসের প্রবর্তন করেছে।

ধারনাটি হচ্ছে, একটি সেমিস্টারের সব শিক্ষার্থীকে ল্যাব ক্লাসের জন্য ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হবে। সর্বোচ্চ চারজন শিক্ষার্থী মিলে একটি গ্রুপ হবে এবং প্রত্যেকে কোনো একটি যন্ত্রে আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষণীয় বিষয়ের ওপর হাতে-কলমে দীক্ষা অর্জন করবে। ঠিক পরের ল্যাব ক্লাসে এই গ্রুপটি ভিন্ন কোনো বিষয়ে অন্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পরীক্ষা চালাবে। এরফলে প্রত্যেক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক সেমিস্টারে, ধরা যাক ১৩ সপ্তাহে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় ল্যাব ক্লাসের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিখতে পারবে।

আশা করা যায়, এই ল্যাব ধারনা কার্যকর করতে পারলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ানিংয়ের অধিত বিষয়গুলো কার্যকরভাবে হাতেকলমে শিখতে পারবে। এটা যদি করা যায় তাহলে কোনো শিক্ষার্থীই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ল্যাব ক্লাস ফাঁকি দিতে পারবে না। ফলে তারা শিখতে পারবে অনেক বেশি। আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি যে, ল্যাবের শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তারা নিজহাতে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার ফলে অনেককিছু শিখতে পারে এবং নিজেদের দুর্বলতাগুলো সনাক্ত করার মাধ্যমে নিজেদের মেধাকে শানিত করতে পারে। ক্লাসের তাত্ত্বিক বিষয়গুলো ল্যাবে গিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় তাদের কাছে।

অতীতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ল্যাব ক্লাসে ফাঁকি দিত এবং শুধু গল্পগুজব করে সময় কাটাত। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ল্যাব ক্লাসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। এই নতুন পদ্ধতির ল্যাব ক্লাস এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ এবং সমাধান করতে হয়। এখানে অন্য কারো দেখে কপি বা নকল করার সুযোগ নেই। সর্বোপরি ল্যাব ক্লাস বর্জন করার কোনো সুযোগ নেই।

নতুন এই ক্লাস পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে সফলভাবে সমাধান করা গেছে। আগে, একজন শিক্ষক পুরো ল্যাব ক্লাস একাই পরিচালনা করতেন। কারণ তখন একটি ক্লাসে একটিমাত্র বিষয়ই হাতেকলমে শেখানো হতো। কিন্তু নতুন ল্যাব ক্লাস পদ্ধতিতে একইসময়ে ১২-১৫টি পরীক্ষা চলমান থাকে, ফলে একজন শিক্ষকের পক্ষে পুরো ক্লাস সামলানো কঠিন। এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে দুটি উপায়ে। এক. প্রথম দুইটি ল্যাব ক্লাসে সাধারণ তাত্ত্বিক ক্লাসের মতো সব শিক্ষার্থীকে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যাপারে সাধারণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তখন শিক্ষকরা ল্যাব শিট, ল্যাবের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার কাগজপত্র ইত্যাদি শিক্ষার্থীদেরকে বিতরণ করেন। সুতরাং শিক্ষার্থীরা ল্যাব ক্লাসে প্রবেশের আগেই ল্যাব

সম্পর্কে একটি পুর্ণাঙ্গ ধারনা পায়। দুই. প্রত্যোক ল্যাব পরীক্ষার ভিডিও তৈরি করা হয় এবং পরে তা ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে তাদের ল্যাব ক্লাস পুণরায় দেখতে পারে এবং ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো

শিখতে পারে।

তবে একটি সমস্যাও দেখা দিয়েছিল এই নতুন ল্যাব ক্লাস পদ্ধতিতে। প্রথম ল্যাব ক্লাস সাধারণত শুরু করা হয় সর্বশেষ তাত্ত্বিক ক্লাসের ভিত্তিতে। ফলে দেখা যায়, একটু দুর্বল শিক্ষার্থীর কাছে বিষয়গুলো অপরিচিত মনে হয়। আমরা এই সমস্যার সমাধান করেছি কোর্স কারিকুলাম নতুনভাবে বিন্যাস করার মাধ্যমে। যে সেমিস্টারে তাত্ত্বিক ক্লাস রয়েছে, ঠিক তার পরের সেমিস্টারেরই ওই তাত্ত্বিক ক্লাসের সম্পূরক ল্যাব ক্লাস রাখা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা অধিত তাত্ত্বিক বিষয়গুলো ভুলে না যায়।

তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাস পরপর দুই সেমিস্টারে হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে জ্ঞানার্জন কার্যকর এবং উপকারী হবে বলে আশা করা যায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close