বিদায় সংবর্ধনায় বক্তারা
পৃথিবীর ১০০ কোটি মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলে
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, একসময় ইংল্যান্ড পৃথিবীর অর্ধেক শাসন করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জার্মান প্রভৃতি ইংল্যান্ডের কলোনি ছিল। বাংলাদেশও ছিল অনুরূপ।
কিন্তু ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন ঘটিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন বাংলাদেশকে ইংল্যান্ডের কলোনিতে পরিণত করে, তখন বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশকে ইংল্যান্ডের কলোনিতে পরিণত করার মাত্র তিন বছরের মধ্যে এই দেশের তৎকালীন ৫০০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করে। ১০ জুলাই মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়স্থ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২৬তম ব্যাচের ফেয়ারওয়েল উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনি ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে বলেন, পৃৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ বর্তমানে ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। বিশ্ববাণিজ্যে, বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইংরেজি ভাষা ব্যবহৃত হয়।
তিনি ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, উইলিয়াম শেকসপিয়ার ইংরেজি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার। তিনি যখন লিখছিলেন, তখন ইংল্যান্ডের জনসংখ্যা ছিল খুবই কম, মাত্র ৫৫ লাখ। কিন্তু আজ পৃথিবীর অগণিত লোক তার লেখা পড়ছে। তিনি অনেকগুলো নাটক ছাড়াও লিখেছেন সনেট, দীর্ঘ আখ্যানকবিতা। এ ক্ষেত্রে হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, কিং লিয়ার, জুলিয়াস সিজার প্রভৃতি নাটকের কথা উল্লেখ্য। তিনি আরো বলেন, ইংরেজি সাহিত্যে উইলিয়াম শেকসপিয়ার ছাড়াও শেলী, কীটস, বায়রন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, টিএস এলিয়ট, এজরা পাউন্ডের মতো বড় বড় সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ইংরেজি সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাই আমরা দেখতে পাই, ইংরেজরা যেমন আমাদের পার্থিব সম্পদে দীন করেছে, কিন্তু মননের জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। রবীন্দ্রনাথ তার শেষ জীবনে লেখা ‘সভ্যতার সংকট’-এ লিখেছিলেন দুই ধরনের ইংরেজ আছে, বড় ইংরেজ ও ছোট ইংরেজ। শৈশবে তিনি বড় ইংরেজকে দেখেছেন, যারা তার অন্তর্জগৎকে সমৃদ্ধ করেছিল। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিনি দেখছেন ছোট ইংরেজকে, যারা মানুষকে ক্ষুদ্র করছে সংঘাতে জড়িয়ে। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। বিশ্বযুদ্ধের সংকট থেকে বিশ্ব একদিন বেরিয়ে আসবে। মানুষই শেষ পর্যন্ত মননের সমৃদ্ধির দ্বারা জয়ী হবে। আমাদের ইংরেজির শিক্ষার্থীদের বড় ইংরেজের চর্চা করতে হবে, মননের চর্চা করতে হবে, মননের শক্তি দিয়েই জয়ী হতে হবে।
আরো বক্তব্য দেন সহকারী প্রক্টর আবদুর রহিম ও সহকারী অধ্যাপক কোহিনুর আকতার। ২৬তম ব্যাচের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ইশতিয়াক হাসান ও উম্মে হাবিবা বৃষ্টি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন শিক্ষার্থী সবুজ ভট্টাচার্য, সাবনিকা হক তিতিল, স্বাগত বিশ্বাস, নাজিফা নিধি ও শুভ দে। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক সুমিত রায় চৌধুরী। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
"