ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ায়
মালয়েশিয়া বর্তমানে শুধু এশিয়ার মধ্যেই নয়, বরং সারা বিশ্বে একটি উন্নত দেশ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সর্বক্ষেত্রে মালয়েশিয়া পৃথিবীর বুকে একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর তাই বিশ্ববাসীর নজর এখন এশিয়ার এ দেশটির দিকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় করেছে অভূতপূর্ব উন্নতি। মালয়েশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য উন্নতমানের উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা বিশেষত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী মালয়েশিয়ায় পড়তে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা চারটি পর্যায়ে বিন্যস্ত। এগুলো হচ্ছে ডিপ্লোমা কোর্স ২ থেকে ৩ বছরমেয়াদি, আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স ৩ থেকে ৫ বছরমেয়াদি, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স ১ থেকে ২ বছরমেয়াদি, পিএইচডি কোর্স ৩-৫ বছরমেয়াদি। এখানকার উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা সেমিস্টারভিত্তিক। প্রতি শিক্ষাবর্ষ ৩টি সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রথম সেমিস্টার : জানুয়ারি-এপ্রিল, দ্বিতীয় সেমিস্টার : মে-আগস্ট ও তৃতীয় সেমিস্টার : সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য ন্যূনতম ১২ বছরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক সমমানের শিক্ষা। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য ন্যূনতম ১৬ বছরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী। ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট। পিএইচডি কোর্সের জন্য পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি এবং ব্যাপক গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা।
মালয়েশিয়ায় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়াশোনার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার নিম্নোক্ত যেকোনো একটি যোগ্যতা থাকতে হবে। টোফেল সিবিটি স্কোর ১৭৩ থেকে ২৫০। টোফেল আইবিটি স্কোর ৬১ থেকে ১০০। আইইএলটিএস (একাডেমিক) ৬ থেকে ৭।
মালয়েশিয়ার উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অসংখ্য বিষয়ে পাঠদান করা হয়। বিষয়গুলো হলো : বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, মেডিসিন, ভেটেরেনারি মেডিসিন, মর্ডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি, হেলথ সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রিকালচার, ফরেস্ট্রি, ইসলামিক স্টাডিজ, সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, এনভায়রোনমেন্টাল সায়েন্স ও ডিজাইন অ্যান্ড আর্কিটেকচার।
আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীকে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট থেকে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। অতঃপর তাকে জানতে হবে তিনি যে বিভাগে ভর্তি হতে চান নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সে বিভাগে ভর্তির আবেদনের শেষ সময়সীমা কবে নাগাদ বিদ্যমান। প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি অফিস বরাবর ভর্তি তথ্য এবং আবেদন ফর্মের জন্য সরাসরি লেখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও সরাসরি আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করে নেওয়া যেতে পারে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু আছে। ভর্তি অফিস থেকে আপনাকে আবেদনপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-সংক্রান্ত সব তথ্য জানাবে। আপনাকে উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্টুডেন্ট পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার পক্ষে আপনার পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন হেডকোয়ার্টার্সের ‘পরিচালক, পাস ও পারমিট বিভাগ’ বরাবর আবেদন করবে। আবেদনের এক মাসের ভেতর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবহিত করবে। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র এবং তথ্যাবলি সংগ্রহের জন্য আপনাকে কমপক্ষে ছয় মাস সময় হাতে রেখে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণ, স্টুডেন্ট পাস অনুমোদন এবং ভিসা ইস্যু ইত্যাদি সবকিছু মালয়েশিয়া থেকে সম্পন্ন করা হয়।
সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের (এবং মার্কশিটের) ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট, স্কুল/কলেজ ত্যাগের ছাড়পত্র, টোফেল অথবা আইইএলটিএস টেস্টের রেজাল্ট শিট, পাসপোর্টের ফটোকপি, আবেদন ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র, পার্সনাল বন্ড ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র, স্টুডেন্ট পাসের ভিসা ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র।
মালয়েশিয়ান পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে টিউশন ফি ৮৮২১ মার্কিন ডলার থেকে ১৭৬৪২ ডলার (সর্বমোট)। মাস্টার্স পর্যায়ে খরচ পড়বে ৫৫৮৬ মার্কিন ডলার থেকে ১০২৯১ মার্কিন ডলার (সর্বমোট)। পিএইচডি ডিগ্রির গবেষণার জন্য খরচ পড়বে ৮৮২১ মার্কিন ডলার থেকে ১০২৯১ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ায় একজন বিদেশি ছাত্রছাত্রীর জীবনযাত্রার বার্ষিক ব্যয় ২৭০০ থেকে ৩০০০
মার্কিন ডলার।
মালয়েশিয়ায় একজন বিদেশি ছাত্রছাত্রী তাদের পূর্ণকালীন শিক্ষা শুরু করার পর কাজের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন। একজন শিক্ষার্থী সেমিস্টার পরবর্তী ছুটিতে অথবা সাত দিনের অতিরিক্ত মেয়াদের কোনো ছুটিতে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পেয়ে থাকেন। ক্যাম্পাসে কাজ করে যে উপার্জন করা সম্ভব, তা দিয়ে টিউশন ফি বা জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব নয়। মালয়েশিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা রেস্টুরেন্ট, পেট্রল পাম্প, মিনি মার্কেট ও হোটেলগুলোয় কাজ করতে পারেন। এসব কাজ থেকে মাসিক ৩০০ থেকে ৭৫০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব।
"