আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মুগাবেকে পদ ছাড়ার আহ্বান জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন দলের
প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের পতন উদ্যাপনে ও পদত্যাগের দাবিতে জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। গত বুধবার দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মুগাবেকে গৃহবন্দি করার দুদিন পর শনিবার সেনাবাহিনী ও মুগাবের রাজনৈতিক দল জানু-পিএএফের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ হারারেতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে পদ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল জানু পিএফ পার্টির আঞ্চলিক শাখাগুলো। দলটির ১০টি আঞ্চলিক শাখার অন্তত আটটি মুগাবেকে প্রেসিডেন্ট ও দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানায় বলে খবর বিবিসির। হারারাতে মুগাবেবিরোধী বিক্ষোভের আগে তাদের এ অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
জানু পিএফ পার্টির উত্তরাধিকার নিয়ে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার সূত্র ধরে গত বুধবার সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায়। এরপরই ৩৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা মুগাবের ‘গৃহবন্দি’ হওয়ার খবর আসে। দক্ষিণ আফ্রিকার মন্ত্রীদের মধ্যস্থতায় শুক্রবার সকালে গৃহবন্দি দশা থেকে বের হয়ে সাবেক গেরিলা নেতা মুগাবে জিম্বাবুয়ের ওপেন ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে উপস্থিত হন।
জিম্বাবুয়ে ডিফেন্স ফোর্সের (জেডডিএফ) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে শনিবার হারারেতে মুগাবেবিরোধী ‘সংহতি বিক্ষোভে’ অংশ নিতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
‘যতক্ষণ পর্যন্ত পরিকল্পিত এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল থাকবে, ঘৃণা বা এমন কোনো উসকানি থাকবে না যাতে সহিংসতার সৃষ্টি হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত জেডডিএফ এতে সমর্থন দেবে,’ বিবৃতিতে বলে তারা। এরপরই জানু পিএফের আঞ্চলিক শাখাগুলো ৯৩ বছর বয়সী মুগাবেকে পদত্যাগের আহ্বান জানায়। তারা দল থেকে গ্রেস মুগাবের পদত্যাগ এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে নানগাওয়াকে পুনর্বহালেরও দাবি জানায়।
সপ্তাহ দুয়েক আগে মুগাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাওয়াকে সরকার ও দল থেকে বহিষ্কারের পরই জিম্বাবুয়েতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। নানগাওয়াকে একসময় মুগাবের উত্তরসূরি বিবেচনা করা হতো, তাকে বহিষ্কারের পর সে জায়গায় মুগাবের স্ত্রী গ্রেসের নাম চলে আসে, দলের যুব শাখায় যিনি বেশ জনপ্রিয়।
গ্রেস-নানগাওয়া দ্বন্দ্বে জানু পিএফ পার্টিও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপরই জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী, যারা মুগাবের জায়গায় নানগাওয়াকেই প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানু পিএফ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও যে এটাই চায় শুক্রবার তা-ও স্পষ্ট হলো। এদিন আঞ্চলিক শাখাগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা টেলিভিশনে মুগাবের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করে। মুগাবের দীর্ঘদিনের সমর্থক গোষ্ঠী প্রবীণ গেরিলাদের সংগঠনও তাকে পদ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ‘আমরা আমাদের মর্যাদা পুনঃস্থাপিত করতে চাই এবং কালই (শনিবার) সেই দিন। সেনাবাহিনী যা শুরু করেছে, আমরা তা শেষ করতে চাই। মুগাবের ফিরে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই, তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে’-বলেন প্রভাবশালী ‘ওয়ার ভেটেরান অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা ক্রিস্টোফার মুতসভাঙ্গোয়া। মুগাবেবিরোধী উদারনৈতিক গোষ্ঠীগুলোও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়েছে।
মুগাবের ওপর ‘অনাস্থা’ এনে তারই ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফ পার্টি তাকে পদত্যাগ করার যে আহ্বান জানিয়েছে, সেই খবর প্রকাশ করে জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। দেশটির দশটি আঞ্চলিক শাখা থেকেই মুগাবেকে পদত্যাগের ডাক দেওয়া হয়েছে।
১৯৮০ সাল থেকে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় রয়েছেন ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। প্রেসিডেন্ট মুগাবে গত সপ্তাহে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করলে এই রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হয়। নানগাগওয়াকে এত দিন প্রেসিডেন্ট মুগাবের উত্তরসূরি ভাবা হলেও সম্প্রতি তার জায়গায় ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবের নাম সামনে চলে আসে। এর জের ধরে নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। আর তারপরই দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী।
"