আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আমেরিকাকে ব্যঙ্গ করে উত্তর কোরিয়ার কার্টুন
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে গতকাল শুক্রবার বাচ্চাদের একটি কার্টুন ছবি প্রচার করা হয়েছে, যে ছবিতে রয়েছে জঙ্গলের বন্ধুদের নিয়ে গল্প। আর এর মধ্যে দিয়ে কার্যত আমেরিকাবিরোধী একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টিভির তৈরি ‘হেজহগের কাছে বাঘ পরাজিত’ নামের এই কার্টুন ছবি দেখে বাইরের দর্শকদের মনে হবে এটা ছোট্ট এক হেজহগের প্রাণ-কাড়া এক গল্প। যেখানে হেজহগ তার গায়ের কাঁটা ফুলিয়ে আর সূক্ষ্মবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে হম্বি-তম্বি করা বাঘের আস্ফালন বন্ধ করে দিয়েছে।
হেজহগের গায়ে থাকে সজারুর মতো কাঁটা। ছোট্ট এই প্রাণীটি গায়ের কাঁটা গুটিয়ে নিজেকে ছোট্ট একটা তুলার বলে পরিণত করতে পারে; কিন্তু প্রয়োজনে সেই গায়ের কাঁটা ফুলিয়ে আত্মরক্ষায় তা ব্যবহার করতে পিছপা হয় না এই হেজহগ।
পর্যবেক্ষকরা বলেন, উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম খুব সহজবোধ্য নয়। এতে হঠাৎ করে কোনো কিছু প্রচারিত হয় না। সবকিছুর পেছনেই কার্যকারণ বা উদ্দেশ্য থাকে। বাচ্চাদের এই অনুষ্ঠানটি তৈরি করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় টিভিতে শিশুদের এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এবং এই কার্টুন ছবিকে দেখা হচ্ছে পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রতিফলন হিসেবে।
এই কার্টুনের গল্প প্রাচীন এক লোককাহিনির ভিত্তিতে তৈরি করা। এই গল্পে জঙ্গলের ছোট ছোট প্রাণীদের নেতৃত্ব দেয় খরগোশ; তাদের হাতে লাল আর্মব্যান্ড বা লাল ফেট্টি বাঁধা। একদিন তাদের এসে শাসায় উদ্ধত বাঘ-হম্বিতম্বি করে বলে আমার বশ্যতা তোমাদের স্বীকার করতে হবে।
কিন্তু কূটবুদ্ধি হেজহগ বাঘকে জব্দ করে। কারণ নিজেকে রক্ষা করতে সে গুটিয়ে ছোট্ট তুলার বলটি হয়ে যায় আর সুযোগ বুঝে গায়ের কাঁটা উচিয়ে বাঘের নাকে খোঁচা দেয়। উপায় না দেখে বাঘ পালায়। অন্য ছোট জন্তুরা যারা প্রথমদিকে বাঘের আনুগত্য মেনে অনিচ্ছায় হলেও মেনে নিতে রাজি ছিল, তারা তখন বিজয়ী হেজহগের সাহস ও কৌশলী বুদ্ধির তারিফ করে উৎসবে মেতে ওঠে।
কমলা রঙের বাঘটা কে?
হয়তো এই বাঘ নিয়ে সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠত না, কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এই কার্টুনের ভূয়সী প্রশংসা করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে বলে এটি সর্বকালের সেরা একটি কাহিনি। তারা লেখে এই কমলা রঙের বাঘটা আমেরিকার প্রতীক, অন্য ছোট জন্তুগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আর সাহসী অথচ বিপজ্জনক হেজহগটি হলো উত্তর কোরিয়া।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএতে এই নিবন্ধটি লিখেছেন একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একজন কর্মী কিম জং-সন। ‘খেপিয়ে তোলা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধ করা উচিত’ এই শিরোনামে লেখা এই নিবন্ধে কিম বলছেন, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে আমেরিকার ‘অজ্ঞতা’ দেখে আমার পুরনো প্রচলিত রূপকথার গল্প ‘হেজহগের কাছে বাঘ পরাজিত’ মনে পড়ে গেল। ‘হঠকারী ওই বাঘটা জঙ্গলের অন্য যেসব জন্তুর ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছিল, তাদের চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত সাহসী হেজহগটার চরিত্রের। এটা বর্তমানের বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে। কোনো দেশেরই আমেরিকাকে প্রশ্ন করার সাহস নেই’, বলেন কিম। ‘এদের পাশে আমার নিজের দেশকে দেখে আমার গর্ব বোধ হচ্ছে।’
অতীতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বাচ্চাদের অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে এবং এমন ধরনের অনুষ্ঠান করতে যা দেশের বাচ্চাদের জন্য প্রাসঙ্গিক হয়। তার এই নির্দেশের ফসল মনে করা হচ্ছে।
"