যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘দেশের জন্য বিপজ্জনক’। আবার নির্বাচিত হলে তিনি আরো বড় হুমকি হয়ে উঠবেন বলে সতর্ক করেছেন ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে গত রোববার রাতে বোল্টন বলেন, ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে দেশ আরো অধপতনে চলে যেতে পারে, যা হয়তো আর সামাল দিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।

একজন রক্ষণশীল রিপাবলিকান হিসাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নির্বাচনটা একবার হয়ে গেলে, তাতে যদি প্রেসিডেন্ট জয়ী হন, তাহলে তার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আর থাকবে না। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে ট্রাম্প আগামীতে ভোট নিয়ে আর রাজনৈতিক চাপে থাকবেন না। তাছাড়া বোল্টনের কথায়, ট্রাম্প এমন একজন নেতা, যিনি কেবল নিজের প্রয়োজনেরই তোয়াক্কা করেন। তিনি গণতন্ত্র বা সংবিধানটাও খুব ভালো করে বোঝেন না।

ট্রাম্পের কোনো দার্শনিক ভিত্তি, কৌশল কিংবা নীতি নেই। ফলে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে কি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না, বলেন বোল্টন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ এবং ব্যক্তিগত স্বার্থÑ এ দুয়ের পার্থক্য ট্রাম্প বোঝেন না। আর এটাই দেশের জন্য ‘সবচেয়ে বেশি বিপদের’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। সাক্ষাৎকারে এবিসি নিউজকে বোল্টন বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্য নন। দেশ চালানোয় তার দক্ষতার অভাব আছে। তিনি একজন রক্ষণশীল রিপাবলিকানও নন। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ‘প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই’ দেখে খুবই উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে বোল্টন বলেন, আমেরিকার জনগণের এ কথা জানা উচিত। ক্ষমতায় থাকা একজন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে জনসম্মুখে এটিই উচ্চপদস্থ এক সাবেক সহযোগীর সবচেয়ে কড়া এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ।

জন বোল্টন সম্প্রতি তার স্মৃতিচারণমূলক বই ‘দ্য রুম হয়্যার ইট হ্যাপেনড’ এর প্রচারকাজে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এই বইতেই তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যোগ্যতার কঠোর মূল্যায়ন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হতে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছিলেন বলেও বইটিতে দাবি করা হয়েছে। বইতে তিনি ট্রাম্পের কাজকর্মে নানা ভুল-ত্রুটির অভিযোগ করেছেন। বোল্টানের এসব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনৈতিক অঙ্গনে ডেমোক্রেটদের দিক থেকেও তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন।

ভিসা ও গ্রিন কার্ড স্থগিত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ১ লাখ ৭০ হাজার বিদেশি কর্মপ্রার্থীর ভিসা এবং গ্রিন কার্ড স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আরো জানান, এই পদক্ষেপটি মহামারিজনিত কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিনিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত কর্মহীন ৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষের চাকরিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। আপাতত চার ধরনের ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেগুলো হলোÑ এইচ-১ বি, এইচ ৪, এল-১ এবং জে ১ ভিসা। এছাড়া ভবিষ্যতে এইচ ১ বি-এর ক্ষেত্রে লটারির চেয়ে যোগ্যতামানে জোর দিতে বলা হয়েছে। মার্কিন অভিবাসন দফতরের পরিসংখ্যান জানায়, ২০১৯ অর্থবর্ষে ১ লাখ ৩৩ হাজার বিদেশিকে এইচ-১ বি ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর বেশিরভাগই ভারত ও চীনের দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। এদিকে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচকরা বলছে, করোনাভাইরাসের মহামারিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী আইন কঠিন করে তুলছে।

"