আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২০

ভারতের বেঙ্গালুরুতে অবৈধ বস্তিতে পুলিশের হামলা

দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মিলে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের বস্তি’ সন্দেহে প্রায় ২০০ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তবে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, পুলিশ এই উচ্ছেদ অভিযানে যাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে, তারা সবাই ভারতের নাগরিক এবং তাদের কাছে দেশটির বৈধ পরিচয়পত্রও আছে। অ্যাক্টিভিস্টদের অভিযোগ, স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বাভালিই সোশ্যাল মিডিয়াতে তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে লাগাতার উসকানিমূলক পোস্ট করে চলেছেন। আর তার ভিত্তিতেই পুলিশ বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে এই অভিযান শুরু করেছে। বেঙ্গালুরুর বেলান্ডার শহরতলিসহ আরো কয়েকটি জায়গায় তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু হয় শনিবার রাতে, দফায় দফায় তা চলতে থাকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ধরে।

শহরের একটি এনজিওর কর্মী আর কলিমুল্লা বলেন, ‘কুন্দনহাল্লি, মোনেকালাসহ মোট চারটি জায়গায় পুলিশ একসঙ্গে বুলডোজার নিয়ে হানা দেয়। তারা বলে, বাংলাদেশিদের দুই ঘণ্টার মধ্যে ঘর খালি করে দিতে হবে। আমি ও আমাদের টিম তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি। পুলিশ ঘরে ঢুকে খাবার পানির পাত্রও লাথি মেরে উল্টে দেয়, কেটে দেয় বিদ্যুৎ সংযোগ। সঙ্গে চলতে থাকে বাংলাদেশিদের নামে গালাগালি।’

স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল, সুবর্ণা নিউজে দাবি করা হতে থাকে তাদের স্টিং অপারেশনেই ফাঁস হয়েছে যে, ওই বস্তির বাসিন্দারা ‘বাংলাদেশি’। চ্যানেলটির দাবি, পুলিশকে ঘুষ দিয়ে তারা ভারতের কাগজপত্র বানিয়েছে। আর তা প্রকাশ হয়ে পড়াতেই নাকি পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়েছে।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও দাবি করেছেন, সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে আইনজীবী ও সমাজকর্মী দর্শনা মিত্র কিন্তু বিবিসির কাছে ভিন্ন ছবি তুলে ধরেছেন।

দর্শনা মিত্র বলেন, ‘আসলে বেঙ্গালুরুর অর্থনীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মারাথাল্লিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর নতুন ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে, অনেক অফিস গড়ে উঠেছে। আর এর ফলে ইনফরমাল সেক্টরে গৃহকর্মী, আবাসন খাতের শ্রমিক, স্কুলবাসের চালক, এমন বহু কাজের সুযোগও তৈরি হয়েছে। এসব কাজের জন্য আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা থেকে দলে দলে লোকজন সেখানে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বাঙালি। মাইগ্রেশন প্যাটার্ন স্টাডি করলে দেখা যাবে, এদের বেশির ভাগই গেছেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে। এখন বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে কে পশ্চিমবঙ্গের বা কে বাংলাদেশি, কর্ণাটকের পুলিশ বা একজন কান্নাডিগা আপাতদৃষ্টিতে সেই ফারাক যেহেতু করতে পারছে না; তাই তাদের অ্যাপ্রোচাটাই হলো মুসলিম হলেই তাদের বাংলাদেশি বলে চালিয়ে দাও।’

তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো বাছবিচারের ব্যাপারই নেই। এবারের ঘটনায় লোকজন তাদের পরিচয়পত্র বা আইডি প্রুফ দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু বেঙ্গালুরুর পুলিশ তা চেক করারও প্রয়োজন বোধ করেনি।’

এদিকে শনি ও রোববারের এই বস্তি ভাঙচুরের পেছনে অনেকেই তুলে ধরছেন গত সপ্তাহে টুইটারে শাসক দল বিজেপির অত্যন্ত প্রভাবশালী বিধায়ক ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা অরবিন্দ লিম্বাভালির একগুচ্ছ পোস্টকে। তার পোস্ট করা ভিডিওতে শহরের একটি বস্তি দেখিয়ে দাবি করা হয়, ওটাই নাকি বেঙ্গালুরুর অবৈধ বাংলাদেশিদের মূল কেন্দ্র। সেখানে তাদের আলাদা রাস্তা আছে, মাসে পাঁচ থেকে আট হাজার রুপিতে বস্তিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছে তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close