আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেভাবে হুমকি হতে পারে ভারত

চলতি সপ্তাহের শুরুতে কূটনীতিবিদ থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, আজাদ কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত। ভারত প্রত্যাশা করছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও এক দিন ভারতের ‘সরাসরি এখতিয়ার’ থাকবে।

দিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়ই পুরো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণের দাবি করে। যুদ্ধও হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু দুই দেশের অংশই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর (জম্মু-কাশ্মীর) এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর (আজাদ কাশ্মীর) নামে।

কাশ্মীরের ১০টি জেলায় ৪০ লাখের মত মানুষ বসবাস করে ১৩ হাজার স্কয়ার কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে। বিতর্কিত এই অঞ্চল নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বারবার ভারতের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। পাকিস্তান জবাব দিচ্ছে। তার এমন বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেছে পাকিস্তান।

১৯৯৪ সালে ভারতের সংসদে এক প্রস্তাবনা পাস করে। যেখানে দাবি করা হয়, ‘পাকিস্তানকে অবশ্যই ভারতের ‘রাজ্য’ জম্মু এবং কাশ্মীরের ওইসব এলাকা থেকে সরে যেতে হবে যেসব এলাকা পাকিস্তান আগ্রাসনের মাধ্যমে দখল করে রেখেছে।’

কিন্তু এবারে অনেকেই শঙ্কিত। গত আগস্ট থেকে মোদি মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ জোর দিয়ে বলেছেন এ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং বরফে ঢাকা এলাকা আকসাই চিন ভারতের জম্মু এবং কাশ্মীরের অংশ। এই তিন মন্ত্রী দেশটির নীতি-নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখে।

ভারত এটাও বলেছে যে আগে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার না দীর্ঘদিনের এমন নীতির পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে তারা। অনেকেই বলছেন এটা ওই অঞ্চলকে নিজেদের করে নেওয়ার সত্যিকারের হুমকি। কেননা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও তার অনেক বক্তব্যে পারমাণবিক অস্ত্র শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেছেন ‘উভয় দেশের নেতারা যেসব কথা বলেছেন, সেসব তারা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি। এটা হতে পারে পাকিস্তান যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ড দিয়েছে তার পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য নতুন ইস্যু তৈরি করছে তারা।’

তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ নিশ্চিত না। অনেকে বলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরন্দ্রে মোদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগের নীতি অনুসরণ করছেন। ফেব্রয়ারিতে কাশ্মীরের এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতের সেনা নিহত হলে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে জঙ্গিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা করেছিল।

পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। ১৯৭১ সালের পর এই দুই দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফেব্রুয়ারির হামলা লাইন অব কন্ট্রোল, যেটাকে এলওসি বলা হয়, সেটার সীমা অতিক্রম করেছিল।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নরেন্দ্র মোদি শিরোনাম হয়েছিলেন এই আদেশ দিয়ে যে একই সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিদের ওপর ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করতে হবে। ভারতের পক্ষ থেকে এই কথাটা তখন বলা হয়েছিল কারণ একটি সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ জন সৈন্য নিহত হয়।

দ্য হিন্দু পত্রিকার কূটনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক সুহাসিনি হায়দার বলছেন, ভারত সম্প্রতি যেভাবে উচ্চারণ করছে ‘পাকিস্তানের দখলকৃত কাশ্মীর’ তাতে করে যেকোনো ব্যক্তি যারা উপমহাদেশে সংকট তীব্রতা বৃদ্ধির পথ নিয়ে গবেষণা করছেন তাদের অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।

দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ এর আগে দুবার কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ২০০৩ সালে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল সেটা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো উস্কানি ছাড়াই ২ হাজারের বেশিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন হয়েছে যার ফলে ২১ জন ভারতীয়র প্রাণ গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close