আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ জুন, ২০১৯

লোকসভার প্রথম অধিবেশনে উঠছে তালাকবিরোধী আইন

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে, প্রথম অধিবেশনেই, তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিরোধী বিলটি পাস করাতে চান বিজেপি সরকার। এর আগে প্রস্তাবিত আইনটি সংসদের লোকসভায় পাস হলেও, আটকে যায় রাজ্যসভায়।

এ মাসের মাঝামাঝিতে বসতে যাচ্ছে দেশটির সপ্তদশ সংসদ অধিবেশন। শুরুতেই আটকে থাকা তিন তালাক বিলটি আবারও তুলতে চান ক্ষমতাসীনরা। সর্বশেষ, এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে অধ্যাদেশ এনছিল সরকার। লোকসভায় পাস হলেও, বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় রাজ্যসভায় আটকে গেছে বিলটি। এদিকে, অধিবেশন শুরুর ৪৫ দিনের মধ্যে বিল পাস না হলে, অধ্যাদেশটি বাতিল হয়ে যাবে। তাই এ নিয়ে বিজেপির তাড়া আছে। যদিও রাজ্যসভায় ক্ষমতাসীনরা সংখ্যালঘু।

কয়েক মাসের মধ্য এই পরিস্থিতি বদলে যাতে পারে। বেশকিছু রাজ্যে ক্ষমতায় আসায়, রাজ্যসভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে বিজেপি। তবে বিরোধীদলের সমর্থন ছাড়া, এই বিল পাস করানো কাজটা সহজ হবে না। আর এটা বুঝেই, বিরোধী নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সমর্থন চেয়েছেন সরকারের প্রতিনিধিরা।

এদিকে, আইনপ্রণয়নে বিরোধীদলের বিরোধিতার সমালোচনা করেন, আন্দোলনকর্মী অধ্যাপিকা তনবির নাসরিন। তার মতে, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের নারীদের নিপীড়ন ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিতে, বিলটি পাস হলে তা হবে, তা যুগান্তকারী ঘটনা। অধ্যাপিকা তনবির নাসরীন বলেন, তিন তালাক বিরোধী আইন সম্পর্কে বিরোধীদলগুলোর যে অবস্থান তা আসলে দ্বিচারিতা। অনেকেই বলেন, তিন তালাক খারাপ। কিন্তু, তার জন্য পুরুষের শাস্তি কাম্য নয়। এটা কেমন যুক্তি? এক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা কোথায় গেল? শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বে নারীদের অধিকার অর্জন করতে দীর্ঘ আন্দোলন চালাতে হয়েছে। এক্ষেত্রেও তাই। ভারতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনে তো কোনো সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক আইন নেই। তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদের আলাদা আইন হবে কেন?? ?বিল পাস করে আইনে রূপান্তর প্রসঙ্গে নাসরিনের মত, দেশে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের নারীদের দীর্ঘদিনের নিপীড়ন ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো একটি রাজনৈতিক দল বা সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপরে নির্ভরশীল হওয়া দুঃখজনক ব্যাপার। লোকসভার বিলটি পাস হয়েছে আগেই। এখন রাজ্যসভায় সার্বিক ঐক্যমতে বিলটি পাস হলে তা যুগান্তকারী ঘটনা হবে। তবে, এখানেই শেষ নয়। এরপর মুসলমান নারীদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর অধিকার আদায়ের বিষয়টি সামনে আসা উচিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দীপেন্দ্র রায়চৌধুরি মনে করছেন, তিন তালাক আইন পাস করার পাশাপাশি আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়ে মুসলমানদের বিশ্বাস অর্জন করতে মোদি সরকার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, সাবকা সাথ সাবকা বিকাস সাবকা বিশ্বাস, এই সেøাগান তুললেই সবার বিশ্বাস অর্জন করা যাবে এমনটা নয়।

অরুণ জেটলি একসময় বলেছিলেন, যারা আমাদের ভোটার, আমরা তাদেরই প্রার্থী করি। সেই কারণেই ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী তালিকায় তিন তালাক বিলের সুবিধা হচ্ছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাকের ভয় থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন মুসলিম নারীরা। সেক্ষেত্রে এই পদক্ষেপে মুসলিম নারীদের, বিশেষ করে কম বয়সি নারীদের সমর্থন পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। নরেন্দ্র মোদি অতীতের বিজেপির গড়পড়তা নীতি থেকে দলকে বের করে আনতে চাইছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি কোনো সম্প্রদায়কে তোষণের নীতি বিলোপ করতে চাইছেন। মোদির লক্ষ্য, দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ। কোনো একটি সম্প্রদায়কে দূরে সরিয়ে রেখে সেটা সম্ভব নয়।

তার মতে, প্রস্তাবিত তিন তালাক আইন এবারও হয়তো আটকে যেতে পারে। বিরোধীরা মুসলিম স্বামীর শাস্তি বিধানের বিরোধিতা করছেন। এমনিতে হিন্দু বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের স্বামী একই অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে। কিন্তু, মুসলিম স্বামীর হবে না। এই অবস্থান থেকে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীরা সরে আসবে বলে মনে হয় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close