আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৯ জুন, ২০১৯

ভারতের বামপন্থিরা জাতীয় দলের মর্যাদা হারাচ্ছে!

সর্বভারতীয় দলের মর্যাদা প্রায় হারাতে বসেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী (সিপিআইএম)। গত লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে ২ শতাংশও ভোট পায়নি পুরোনো এই বামপন্থি রাজনৈতিক দলটি।

জাতীয় দল হিসেবে পরিচিতির বদলে এখন মাত্র চারটি রাজ্যে নিজেদের সলতে কোনোভাবে জ্বালিয়ে রেখেছে এক দশক আগেও সংসদীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখা দলটি। যত দিন যাচ্ছে ঐহিত্যবাহী এই দলটিকে মানুষ ততই দূরে ঢেলে দিচ্ছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে টানা প্রায় সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় ছিল সিপিআইএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার। সাধারণ মানুষের কাছে দলটি ‘সিপিএম’ হিসেবেই পরিচিত। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ক্ষমতা হারায় বামপন্থিরা। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বাম-শিবিরের রক্তক্ষরণ আটকানো যাচ্ছিল না।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যই ছিল বামপন্থিদের ঘাঁটি। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে দলটির কোনো প্রার্থীই মানুষের রায় পায়নি। নরেন্দ্র মোদির বিজেপির উত্থানের এইকালে দলের নেতারা ৪২টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে লোকসভায় দুটি আসন জিতেছিল সিপিএম। এবার জনগণ তাদের একেবারে শূন্য হাতে ফিরিয়েছে। অপর দিকে গতবার বিজেপির আসন ছিল দুটি, এবার তারা ১৮টি আসনে জিতেছে।

বামপন্থিদের আরেকটি ঘাঁটি ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। ২০১৮ সালে সেই রাজ্যও বিজেপির হাতে চলে যায়। এক বছরের ব্যবধানে লোকসভা নির্বাচনে মানুষ সেখানে বিজেপিকেই নির্বাচিত করেছে।

কেরালা রাজ্যে বামপন্থিরা ও কংগ্রেস পাল্টাপাল্টি করে ক্ষমতায় আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এখনো সেখানে ক্ষমতায় আছে বামপন্থিরাই। তারপরও সেখানে মাত্র একটি আসনে জিতেছে সিপিএম। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তার নিজের খাসতালুক উত্তর প্রদেশের আমেথিতে হারলেও এই রাজ্যের একটি আসন থেকে জিতে লোকসভায় প্রবেশের টিকিট পেয়েছেন। তবে এখানে বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি।

গত লোকসভা ভোটে সারা দেশে মাত্র ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে সিপিএম। কেরালায় একটি ও তামিলনাড়–তে দুটি আসনে জিতেছে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির দল। আর এই শোচনীয় ফল দেখে নেতাদের মনে প্রশ্ন একটাই, জাতীয় দলের তকমা থাকবে তো?

ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় বা রাজ্য দলের স্বীকৃতি দেয় ভারতের নির্বাচন কমিশন। তিনটি মাপকাঠিতে এটি নির্ধারণ করা হয়। কমপক্ষে তিনটি রাজ্য থেকে লোকসভায় ১১টি আসন পেতে হবে। দ্বিতীয়ত চারটি রাজ্যে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। তৃতীয়ত চারটি লোকসভা আসনে জয় অথবা চার রাজ্যে রাজ্য দলের মর্যাদা থাকতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের একমাত্র ভরসা এখন তামিলনাড়– রাজ্য। সেখানে ৩৯টি আসনের মধ্যে দুটি আসন পেয়েছে সিপিএম। কোনো রাজ্যে ২৫টির মধ্যে একটি বা সেই অনুপাতে লোকসভা আসন পেলে রাজ্য দলের তকমা জোটে। পরিসংখ্যান বলছে, তামিলনাড়ুতে ১ দশমিক ২৮ আসন পেয়েছে সিপিএম। আর এই পরিসংখ্যানের জোরেই আপাতত আশায় বুক বাঁধছেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, বিমান বসুরা।

মূলত, ভারতে এবার লোকসভা ভোটের ফলের পর বিজেপি, কংগ্রেস ছাড়া বাকি সব দলই এখন জাতীয় দলের মর্যাদা নিয়ে চিন্তায় আছে। কারণ, সিপিএমের মতোই হাল হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজাবাদী পার্টি-বসপা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, বামপন্থিদের আদি দল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই বা শারদ পাওয়ারের এনসিপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close