আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৪ এপ্রিল, ২০১৯

অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত না পাঠানোর আহ্বান লেবার পার্টির

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যেন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া না হয়, সে দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এরই মধ্যে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ না করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিরোধীদল লেবার পার্টি। দলটির নেতা জেরেমি করবিন থেকে শুরু করে ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়ান অ্যাবোট পর্যন্ত এ দাবিতে একাত্ম হয়েছেন। তাদের দাবি, মানবাধিকারের সুরক্ষার তাগিদে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যেন কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ না করা হয়। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এখনো পর্যন্ত এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেননি। উল্টো অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতারকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।

২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ৪ এপ্রিল উইকিলিকসের টুইটে বলা হয়, ইকুয়েডর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দুটি সূত্র থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে অ্যাসাঞ্জকে দূতাবাস থেকে তাড়ানো হতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে গত বৃহস্পতিবার তাকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইকুয়েডর। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে তার পাঁচ বছরের কারাদ- হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতেই অ্যাসাঞ্জকে যেন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া না হয়, সে দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন লেবার পার্টির নেতারা। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেছেন, ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকা যে নৈরাজ্য চালিয়েছে, তার প্রমাণ ফাঁস করার দায়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ চাওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের উচিত এর বিরোধিতা করা।

লেবার পার্টির নেতা এবং যুক্তরাজ্যের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়না অ্যাবোট বলেছেন, কম্পিউটার হ্যাকার গ্যারি ম্যাককিনোনের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রত্যর্পণ রুখে দিয়েছিলেন থেরেসা মে, সেভাবেই যেন তিনি অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণও রুখে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে মানবাধিকারের সুরক্ষার যুক্তিতে ম্যাককিনোনের প্রত্যর্পণে না করে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে।

এডওয়ার্ড স্নোডেনের দাবি, অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের সামিল। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মা ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসাঞ্জের দাবি, ‘থেরেসা মে ব্রেক্সিট থেকে নজর ঘোরাতেই আমার সাহসী, মেধাবী, সাংবাদিক ছেলেকে বেআইনিভাবে, কাপুরুষের মতো গ্রেফতার করাল।’ ইকুয়েডরের প্রসিডেন্টের উদ্দেশ্যে ক্রিশ্চিয়ানের টুইট, ‘লজ্জাজনক, আপনি একজন বিশ্বাসঘাতক। আমার নির্দোষ ছেলের স্বপ্ন আপনার রাতের ঘুম কাড়বে। আমার ছেলেকে যেভাবে অত্যাচার করেছেন, আমি চাই আপনার আত্মাও একইভাবে সেই অত্যাচারের কষ্ট অনুভব করুক।’

এসব বক্তব্য-বিবৃতি-প্রতিবাদে অবশ্য বিচলিত নন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তার ভাষায়, ‘এই গ্রেফতার প্রমাণ করল, যুক্তরাজ্যে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্টও নিজের সিদ্ধান্তের যুক্তি হিসেবে বলেছেন, ‘অ্যাসাঞ্জ আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করেছেন। বাধ্য হয়েই সার্বভৌম সিদ্ধান্ত হিসেবে তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করেছে ইকুয়েডর।’

ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, ৪৭ বছরের এই অস্ট্রেলীয় অ্যাক্টিভিস্টের বিরুদ্ধে কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিপুল পরিমাণ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অবশ্য এই অভিযোগের কথা জানা গিয়েছিল আগেই। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়া জেলা আদালতে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগ গঠনের নথি ভুল করে ফাঁস করে ফেলেন প্রসিকিউটররা। এতদিন গোপনে সেই বিচারিক অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টা জারি ছিল। স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে অ্যাসাঞ্জ গ্রেফতারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

২০১০ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে এনে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলেছেন একজন ফেডারেল প্রসিকিউটর। তবে মানবাধিকার প্রশ্নে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত না পাঠানোর বৈশ্বিক দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনসহ দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, আল জাজিরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close