আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৬ এপ্রিল, ২০১৯

বিরোধী মানেই দেশদ্রোহী নয় : নিজ ব্লগে আদভানি

মোদি-অমিত শাহেরা গত পাঁচ বছর ধরে তাকে যেভাবে উপেক্ষা করেছেন, যেভাবে দীর্ঘদিনের জেতা গান্ধীনগর আসন থেকে তাকে প্রার্থী না করে কার্যত অবসরে যেতে বাধ্য করেছেন, তাতে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ আদভানি। কেউ রাজনৈতিক মতের বিরোধী হলেই তাকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে দাগিয়ে দেওয়াটা বিজেপির জাতীয়তাবাদ নয় বলে মনে করিয়ে দিলেন লালকৃষ্ণ আদভানি।

পাঁচ বছর পরে নিজের ব্লগে কলম ধরে আদভানির এই মন্তব্যের লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ বলেই বিরোধী নেতারা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। লোকসভা ভোটের প্রচারে মোদি রোজই টানছেন বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান প্রসঙ্গ। সেই সূত্রে কংগ্রেস তথা বিরোধীদের নিশানা করে তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, কাজ দিয়ে নয়, উগ্র জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলে ভোটে জিততে চেয়ে সেনাকে হাতিয়ার করতে চাইছেন মোদি। আদভানি আজ ঠিক এখানেই আঘাত করেছেন।

মোদি-অমিত শাহেরা গত পাঁচ বছর ধরে তাকে যেভাবে উপেক্ষা করেছেন, যেভাবে দীর্ঘদিনের জেতা গান্ধীনগর আসন থেকে তাকে প্রার্থী না করে কার্যত অবসরে যেতে বাধ্য করেছেন, তাতে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ আদভানি। কিন্তু মুখ খোলেননি এতদিন। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণের ঠিক এক সপ্তাহ আগে মোদি যখন প্রচারের সুর তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছেন, ঠিক তখনই কার্যত ব্রহ্মাস্ত্র ছাড়লেন এই প্রবীণ নেতা। ৬ এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসকে উপলক্ষ করে, তার দুদিন আগে আজ নিজের ব্লগে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতিকে স্পষ্ট বার্তা পাঠালেন।

দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে মোদি জমানায় গুরুত্ব কমিয়ে ‘মার্গদর্শক ম-লি’তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই আদভানি এ দিন নিজের ব্লগে মূলত তিনটি কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এক, জন্মলগ্ন থেকে বিজেপি কখনো রাজনৈতিক মতবিরোধীদের ‘শত্রু’ বলে মনে করেনি। শুধু বিপক্ষ হিসেবেই ভেবেছে। দুই, বিজেপি যেভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে দেখে, তাতে কখনো রাজনৈতিক মতবিরোধীদের ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ বা দেশদ্রোহী হিসেবে দেখা হয় না। তিন, বিজেপি প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পছন্দের স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধ।

তিনি বলেছেন, বিজেপি নেতৃত্বকে নিজের ভেতরে তাকাতে হবে। অতীতের দিকেও তাকাতে হবে।

আডবানীর এই ব্লগের পরে মোদি টুইটারে সযতেœ দেশদ্রোহী নিয়ে দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার বক্তব্যকে এড়িয়ে গিয়েছেন। বরং লিখেছেন, ‘আডবানীজি বিজেপির সত্যিকারের চরিত্র তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে বিজেপিকে পথ দেখানোর মন্ত্র। যা বলে, সবার আগে রাষ্ট্র, তার পরে দল, সবশেষে নিজে।’

মোদি এড়িয়ে গেলেও ছাড়েননি বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এতদিন বিরোধীরা যেসব কথা মোদিকে বলছিলেন, আজ বিজেপির অন্দরমহল থেকেই তা উঠে এসেছে। আডবানী আক্ষরিক অর্থেই মোদি শাহকে ‘মার্গদর্শন’ করিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন, ‘প্রবীণতম রাজনীতিক, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে যা বলেছেন, তা উল্লেখযোগ্য। যারা বিরোধী আওয়াজ তোলেন, অবশ্যই তারা সকলে দেশদ্রোহী নন।’

আডবানীর ব্লগে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে বিজেপি। দলের মুখপাত্রেরা বলার চেষ্টা করেছেন, আডবানী যা বলেছেন, তা বিজেপিরই কথা। কিন্তু বাস্তব যে উল্টো, তা তারাও বুঝতে পারছেন। কারণ ৯১ বছর বয়সি আডবানী দলের মধ্যে ‘গণতন্ত্র’ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। মোদির জামানায় একের পর এক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপরে আঘাত আসছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গ তুলেই আডবানীর যুক্তি, ‘বিজেপি বরাবরই সংবাদমাধ্যমসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রথম সারিতে থেকেছে।’

আডবাণীর ব্লগকে কিভাবে অস্ত্র করা হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণে বসেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, আডবানীর ক্ষোভ থেকে বিজেপিতে প্রবীণদের অসম্মানের বিষয়টি স্পষ্ট। রাহুল গান্ধী কংগ্রেসে প্রবীণ নেতাদের যে সম্মান দেন, বিজেপিতে মোদি শাহ তা দেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close