আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৫ এপ্রিল, ২০১৯

বিজেপি বনাম তৃণমূল

নির্বাচনী প্রচারে বাংলার রাজনীতির অবমূল্যায়ন

কলকাতাভিত্তিক সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও প্রখ্যাত আইনজীবী অরুনাভ ঘোষ বেশ কিছুদিন ধরে গভীর অসন্তুষ্টির মধ্যে আছেন। এই হতাশার কারণ ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তার দলের ঠিকে থাকার সংগ্রাম বা আইন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। তার পরিতাপের কারণ হলো বঙ্গের রাজনীতি চরম দূরাবস্থার মধ্যে পৌঁছে গেছে। এই নেতার আশঙ্কা, বঙ্গের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সন্দেহ দূর করতে হলে বিজেপি ও তৃণমূল নেতাদের মধ্যকার চলমান বাকযুদ্ধের বিষয়বস্তু ও শব্দচয়নে ভ্রষ্টাচার অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

অরুনাভ ঘোষ বলেন, ‘৩০ বছরের কম বয়সি বাঙালিদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে আমরা শ্যামপ্রসাদ মুখার্জী, হিরেন মুখার্জী, জ্যোতি বসু, সোমনাথ লাহিরি, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, জয়নাল আবেদিনের মতো পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন এই রাজ্য থেকে। তারা লোকসভা ও বঙ্গের অ্যাসেম্বলিতেই খ্যাতি অর্জন করেছেন। পুরোনো রেকর্ডে তাদের উচ্চ মানের বাগ্মিতা ও বিতর্কের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান ও জ্ঞান সহকারে নিয়ম মেনে তুলে ধরতেন, যা মানুষকে মুগ্ধ করত। আর এখন আমরা কোথায়...।’

ঘোষের কথায় যুক্তি আছে। বেশির ভাগ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি তার সঙ্গে একমত হবেন। যে রাজনৈতিক বিতর্কের ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরলেন ঘোষ তা সম্প্রতিক বঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বারাকপুর লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের মধ্যকার বাকযুদ্ধে লেশমাত্র নেই।

অর্জুন সিং কিছুদিন আগেও তৃণমূলের নেতা ছিলেন। স্থানীয়ভাবে দৃঢ়চেতা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে এবং বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে তার সমর্থন রয়েছেন। উত্তর ভারতীয় দল বলে পরিচিত বিজেপিতে তিনি মাত্র কিছুদিন আগে যুক্ত হয়েছেন। কারণ হলো বারাকপুরে তৃণমূল অর্জুন সিংয়ের বদলে প্রবীণ নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিনের ত্রিবেদীকে প্রার্থী মনোনীত করেছে।

তৃণমূলের আরো দুই সাবেক এমপি সৌমিত্র খান ও অনুপম হাজরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। উভয়েই লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অর্জুন সিং নিন্দাবাদের মুখে পড়েছেন এবং তার অনুসারী ও সমর্থকেরা ধারাবাহিক পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সৌমিত্র খানের বিরুদ্ধে পুরোনো ঝুলে থাকা মামলা পুলিশ আকস্মিকভাবে সচল করেছে। তাকে অন্যের সহায়তায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। কারণ কলকাতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি সংসদীয় আসনে যেতে পারছেন না।

তবে অর্জুন সিংয়ের ক্ষেত্রে বঙ্গ প্রশাসন ও তৃণমূল সহজে পার পাচ্ছে না। পুলিশ যখন পুরোনো অভিযোগে তার কয়েকজন সমর্থককে গ্রেফতার করে তিনি তখন কলকাতার উত্তরাঞ্চলীয় শহরতলীর স্থানীয় থানা কয়েক ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন। এতে ব্যাহত হয় যান চলাচল। পুলিশ অবরুদ্ধ থাকে এবং তৃণমূলের বিরোধীদের দমনে যে আগ্রাসী ভূমিকায় থাকে তা প্রয়োগ করতে পারেনি। কারণ নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের জন্য কঠোর শৃঙ্খলাবিধি আরোপ করেছে।

দ্বিতীয় ধাপে মল্লিক ও সিং তিক্ত বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। মল্লিক কোমল ভাষায় আক্রমণ করেননি, তিনি অর্জুনের বিরুদ্ধে পুরোনো দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন, যে দল তাকে কাজের জন্য বড় ধরনের পুরস্কার দিয়েছে। তিনি অর্জুন সিংকে ভাটপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যানের পদত্যাগে অপসারণের হুমকি দেন। এই পদে অর্জুনের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আরো খারাপ হলো, খানের মতোই অর্জুনের বিরুদ্ধে থাকা পুরোনো মামলা সচল হবে। উত্তর ২৪ পরগণার সিনিয়র তৃণমূল নেতা হিসেবে ক্ষমতা দেখিয়ে কথা বলেছেন মল্লিক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close