আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৫ মার্চ, ২০১৯

সেনা অভ্যুত্থানের ৫ বছর পর থাইল্যান্ডে ভোট

নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর ভোটকেন্দ্রের দিকে ছুটছে থাইল্যান্ডের ৫ কোটি ভোটার।

বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল দেশটিতে এবারের নির্বাচনে সামরিক বাহিনী ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থকদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকেই সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও ধারাবাহিকভাবেই ভোট পিছিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সেনাবাহিনীর আমলে করা নতুন সংবিধানেই এবারের ভোট হচ্ছে। যে কারণে ফল যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীরই প্রভাব অক্ষুণœ থাকবে, বলছেন সমালোচকরা।

২০১১ সালের পর হতে যাওয়া এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশ ভালো থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সি ৭০ লাখেরও বেশি থাই নাগরিক এবারই প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। জয়-পরাজয়ে এ তরুণরাই নিয়ামক হয়ে ওঠতে পারে ভেবে সব দলই তাদের ভোট বাক্স ভরতে উদগ্রীব।

নির্বাচনের আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে থাই রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা’ বজায় রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

গত শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ওই বিবৃতিতে রাজা ভোটারদের প্রতি ‘ভালো মানুষদের সমর্থন’ দেওয়ারও অনুরোধ জানান। গতকাল রোববারের এ ভোটে মূলত সামরিক বাহিনী সমর্থিত দল ও থাকসিনের মিত্রদের মধ্যে লড়াই হবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৯৩ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। এরপরই শুরু হবে গণনা।

২০০৬ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া থাকসিন ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে আদালত ঘোষিত দণ্ড এড়াতে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এরপরও তার জনসমর্থন ব্যাপক, বিশেষ করে গ্রামীণ ও অসচ্ছল ভোটারদের মধ্যে থাকসিন এখনো বেশ প্রভাবশালী।

২০০১ সালের পর থেকে দেশটিতে হওয়া প্রায় সব নির্বাচনেই থাকসিন সমর্থিত দলগুলো বিজয়ী হয়েছে। ক্ষমতা দখলের পর থেকে সেনাবাহিনীও অনানুষ্ঠানিকভাবে তার প্রভাব কমানোর দিকেই বেশি মনোযোগী ছিল, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।

থাকসিন অনুগত দলগুলোর মধ্যে পিউ থাই পার্টিই এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৪ সালে থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া জেনারেল প্রায়ুথ চান ওচাই এবারের নির্বাচনে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সামরিক বাহিনীপন্থি নবগঠিত দল পালাং প্রাচা রাথ পার্টি (পিআরআরপি) থেকে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিসিত ভেজাজিভা ও তরুণ টেলিকম ব্যবসায়ী থানাতর্ন জুয়ানগ্রুংরুয়াংকিতের ফিউচার ফরওয়ার্ড পার্টি।

পাঁচ বছর আগের অভ্যুত্থানের সময় সামরিক বাহিনী বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে চলে আসা বিক্ষোভ থামিয়ে দেশে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

যদিও ক্ষমতা দখলের পর থেকে তারা কর্তৃত্ববাদী উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় তারা গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনা নিষিদ্ধের আইন করে বিরোধীদের দমিয়ে রেখেছে বলেও ভাষ্য অনেকের।

গতকাল রোববারের নির্বাচনে ভোটাররা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫০০ সদস্যকে নির্বাচিত করবে। নতুন সংবিধান অনুযায়ী, সেনাবাহিনী উচ্চকক্ষ সিনেটের ২৫০ সদস্যের মনোনয়ন দেবে। দুই কক্ষের সদস্যদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে নির্বাচিত হবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনে একটি দল সর্বোচ্চ কী পরিমাণ আসন জিততে পারবে, নতুন এ সংবিধানে তার সীমাও ঠিক করে দেওয়া আছে। সামরিক বাহিনী প্রস্তাবিত ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও ভবিষ্যৎ সরকার বাধ্য থাকবে। বিবিসি বলছে, নতুন সংবিধানের কারণে সামরিক বাহিনীর পছন্দের প্রার্থী জেনারেল প্রায়ুথের প্রধানমন্ত্রী হতে নিম্নকক্ষের মাত্র ১২৬ সংসদ সদস্যের সমর্থন লাগবে। নির্বাচিতরা চাইলে সংসদ সদস্য ছাড়াও যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close