আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ মার্চ, ২০১৯

নিউজিল্যান্ডে খুনের যোগসূত্রে অস্ট্রেলীয় দুই বাড়িতে পুলিশ

আগে ঘোষণা দিয়ে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে গুলি করে ৫০ মুসল্লিকে হত্যা করা অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্টের সঙ্গে যোগসূত্র থাকা দুই বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার এ অভিযান পরিচালনা করে অস্ট্রেলীয় পুলিশ। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

যে দুই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ তার একটি স্যান্ডি বিচ শহরে এবং অপরটি লরেন্স শহরে অবস্থিত। এ দুটি এলাকা গ্রাফটন শহরের কাছে অবস্থিত, যেখানে বেড়ে ওঠেছে খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট। পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, এমন কিছু উপাদান খুঁজে বের করা যা নিউজিল্যান্ড পুলিশকে তাদের চলমান তদন্তে সহায়তা করতে পারে। ব্রেন্টন ট্যারান্টের পরিবারও পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে। তবে অভিযানে ‘বর্তমান বা আসন্ন হুমকির’ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ব্রেন্টন ট্যারান্ট নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়া ত্যাগের আগে এ গ্রাফটন শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া সফর করেন। এ সময় সে এসব দেশের ইতিহাসের নানা উল্লেখযোগ্য রণক্ষেত্রগুলো পরিদর্শন করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তুরস্ক, বুলগেরিয়া ও ইসরায়েল সফর করে ঠান্ডা মাথার এ খুনি।

মসজিদে হামলার আগে অনলাইনে ১৬ হাজার ৫০০ শব্দের একটি ইশতেহারে নৃশংস এ হামলার পেছনে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট। সেখানে মোটা দাগে ওঠে আসে মুসলিমবিদ্বেষ, অভিবাসীবিদ্বেষ ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের মতো বিষয়গুলো। মুসলমানদের উসমানীয় খিলাফতের (বর্তমান তুরস্ক) বিরুদ্ধে তৎকালীন ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের বিজয়ের কথাও উল্লেখ করে তিনি। বর্তমান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের মৃত্যুও কামনা করে এই হামলাকারী।

কথিত ইশতেহারে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের এই নৃশংস খুনি দাবি করে, শ্বেতাঙ্গরা গণহত্যার শিকার এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শ্বেতাঙ্গ পরিচয়ের নতুন প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে মুসলমানদের জন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরিরও আহ্বান জানা তিনি।

হামলাকারী নিজের সম্পর্কে বলেন, ‘আমার ভাষার উৎস ইউরোপীয়। আমার রাজনৈতিক আদর্শ ইউরোপীয়। আমার দার্শনিক অবস্থান ইউরোপীয়। আমার পরিচয়, আমি ইউরোপীয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমার রক্ত ইউরোপীয়।’ লেখক তার পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছেন, তিনি একটি শ্রমজীবী শ্রেণির নিম্ন আয়ের পরিবারে বেড়ে ওঠেছেন। তার ভাষ্য, ‘আমি একটা সাধারণ পরিবার থেকে আসা সাধারণ এক শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, যে তার নিজ গোষ্ঠীর মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বাবা-মা স্কটিশ-আইরিশ-ইংলিশ বংশোদ্ভূত। আমার একটা সাধারণ শৈশব কেটেছে, যেখানে বলার মতো কোনো ঘটনা নেই।’

তিনি দাবি করেন, তিনি একজন ‘অন্তর্মুখী’ মানুষ, একজন ‘নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদী’ এবং ‘ফ্যাসিস্ট।’

ট্যারান্ট লিখেছেন, এই হামলার পরিকল্পনা দুই বছর আগের। নিউজিল্যান্ড হামলার স্থান হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল না। তিন মাস আগে হামলার জন্য নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চকে বেছে নেওয়া হয়। আমি নিউজিল্যান্ডে এসেছিলাম সাময়িক সময়ের জন্য, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ নিতে। কিন্তু এখানে এসে আমি আবিষ্কার করি, বিশ্বের অন্য যেকোনও ভালো টার্গেটের চেয়ে এটি কোনও অংশে কম নয়।

এই অস্ট্রেলীয় খুনির ভাষায়, ‘আমি বার্তা দিতে চেয়েছিলাম যে দুনিয়ার কোনও স্থানই নিরাপদ নয়। আমি সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটি এই কারণেই বেছে নিয়েছিলাম যেন ঘটনাটি ব্যাপক প্রচার পায়, মানুষের আলোচনায় ও সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পায়।’ ট্যারান্টের ব্যবহৃত অস্ত্রটি ছিল একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। সূত্র: আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close