আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

রাশিয়া মিসাইল ক্রাইসিসের জন্য প্রস্তুত : পুতিন

কিউবায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে ৫৭ বছর আগে যে যুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে সেরকম আরেকটি ‘মিসাইল ক্রাইসিসের’ জন্য রাশিয়া সামরিকভাবে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য করলে মস্কো মার্কিন জলসীমার কাছে জাহাজে কিংবা সাবমেরিনে শব্দের চেয়েও কয়েক গুণ গতিসম্পন্ন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

গত বুধবার রাশিয়ার ফেডারেল অ্যাসেম্বলিতে সংসদ সদস্য, বিভিন্ন অঞ্চলের গভর্নর ও সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুতিন এ হুশিয়ারি দেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় ১৯৬২ সালে তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের প্রতিক্রিয়ায় কিউবায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় মস্কো। ফ্লোরিডা থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরের দেশে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি ও তার প্রশাসনকে আতঙ্কিত করে তোলে; পরিস্থিতির মোকাবিলায় কিউবায় সামরিক হস্তক্ষেপেরও হুমকি দেন তিনি, যা বিশ্বের দুই পরাক্রমশীল শক্তিকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিলে দুই সপ্তাহের ওই টানটান উত্তেজনার ‘মিসাইল ক্রাইসিসের’ অবসান ঘটে। সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভকে কেনেডি তুরস্ক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলেও পরে জানা গেছে।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পর ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ফের মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধের সময় স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইউরোপে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ইঙ্গিত দেওয়ায় এ পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত ওই ‘ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ)’ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

আইএনএফ থেকে সরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়ার কাছাকাছি ইউরোপের কোথাও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে, তাহলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের ভূখ-ের কাছাকাছি একই ধরনের কিংবা তার চেয়েও দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে, বলেছেন পুতিন।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এমন জায়গায় মোতায়েন করা হবে, যেখান থেকে সহজে এবং দ্রুততম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

‘এগুলো (হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র) স্থির বসে থাকবে না, তারা গতিশীল থাকবে এবং (লক্ষ্যবস্তুকে) খুঁজে নেবে। আপনার এ নিয়ে কাজ করতে পারেন, এর গতি থাকবে ম্যাচ নাইন (শব্দের থেকেও ৯ গুণ বেশি), আওতা হবে ১ হাজার কিলোমিটার’ পুতিন এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। রুশ প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্য সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পুতিনের আগের এ ধরনের হুশিয়ারিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল ওয়াশিংটন। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই যে আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘন করে আসছে মার্কিন এ অভিযোগকে পাশ কাটাতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এসব বলতেন বলেও ইঙ্গিত ছিল তাদের।

যুক্তরাষ্ট্র চলতি মাসের প্রথমদিনই ওই চুক্তির কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। মস্কো আইএনএফের লঙ্ঘন বন্ধ না করলে ছয় মাস পর তা পুরোপুরি বাতিল হবে বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন। পুতিন বলেছেন, তিনি কোনো ধরনের ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ চান না, তবে ওয়াশিংটন ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলে তার হাতে অন্য কোনো বিকল্পও থাকবে না।

তিনি বলেন, এখনকার হিসাব তাদের পক্ষে নেই, অন্তত আজকে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এটা নিশ্চিত। উত্তেজনা ১৯৬০-এর কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের সময়ের মতো নয়, কোনোভাবে সে পর্যন্ত গড়াক, তা আমরা চাইও না। যদি কেউ চায়, ঠিক আছে, তাদের স্বাগতম। এর অর্থও আজ আমি জানিয়ে দিতে চাই। তাদের (ক্ষেপণাস্ত্র উড্ডয়নের সময়) গুনতে দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close